ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সুপারনিউমেরারি পোস্ট অর্থাৎ অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরির ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দিল সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিলেন, সাংবিধানিক পদ্ধতিতে মন্ত্রিসভা অতিরিক্ত শূন্যপদ (Supernumerary Case) তৈরি করতেই পারে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, মন্ত্রিসভার কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করা হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো বিঘ্নিত হতে পারে।
অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট (Supernumerary Case)
এসএসসিতে নিয়োগের জন্য ছ’হাজারের কাছাকাছি অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করেছিল শিক্ষা দফতর। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও ওই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। মামলা কারীদের অভিযোগ ছিল অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিতেই এই অতিরিক্ত শূন্য পথ তৈরি করেছে রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলায় নির্দেশ দিয়েছিল, অতিরিক্ত শূন্য পদ (Supernumerary Case) তৈরীর নির্দেশ সঠিক ছিল না। প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
আরও পড়ুন: Supreme Court: যোগ্যদের চাকরি বহাল থাকুক, সুপ্রিম কোর্টে আর্জি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের!
সেই নির্দোষ কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দারস্ত হয়েছিল রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুর কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট ডিভিশান বেঞ্চের সেই নির্দেশকে খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার। এই ঘটনায় সিপিআইআর তদন্ত করতে পারবে না বলে ও জানিয়ে দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টে এই মামলার শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য্য আদালতে বলেন, ‘স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে যে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিতেই এই অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করা হয়েছিল। অবৈধভাবে নিযুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতেই এই শূন্য পদ (Supernumerary Case) তৈরি করা হয়েছিল।’

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, ‘মন্ত্রিসভার কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করলে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো বিঘ্নিত হতে পারে।’ সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ রাজ্যের শাসক দল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যে বড় স্বস্তি, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: এরা কেউ প্রকৃত মেধাযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মী নন: শুভেন্দু অধিকারী
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের প্রেক্ষিতে কিছু অযোগ্য চাকরিপ্রাপকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই সময়েই প্রায় ৬ হাজার সুপারনিউমেরারি পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা দফতর। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও ওই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হয়। মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের অভিযোগ করেন, বেআইনি নিয়োগ বাঁচাতেই জন্যই সুপারনিউমেরারি বা অতিরিক্ত পদ (Supernumerary Case) তৈরি করা হয়েছিল। ওই মামলার শুনানিতে তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।
পরে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে যায়। গত বছরের ২২ এপ্রিল বিশেষ বেঞ্চও একই নির্দেশ বহাল রেখে রায় দেয়, সুপারনিউমেরারি পদ (Supernumerary Case) তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। সিবিআই প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। এবার সিবিআই তদন্তই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ।