ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ রুখতে করা আবেদন খারিজ করে দিল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট (Tahawwur Rana)। ফলে ভারতের হাতে তার প্রত্যর্পণের আইনি পথে আর কোনও বাধা থাকল না। সোমবার আমেরিকার শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের বেঞ্চে গত ৪ এপ্রিল যে আবেদনটি পাঠানো হয়েছিল, তা গৃহীত হয়নি।
ভারতের অভিযোগ (Tahawwur Rana)
৬৪ বছরের তাহাউর রানার বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগ, ২৬/১১-র মুম্বই হামলায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন (Tahawwur Rana)। তাঁর সহযোগী ছিলেন আর এক অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলি। হেডলি ইতিমধ্যেই আদালতে রানার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে জানিয়েছেন, মুম্বই হামলার প্রস্তুতিতে রানা সরাসরি জড়িত ছিলেন। সে সময় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-এ-তইবার ১০ জন সদস্য ভারতীয় উপকূল দিয়ে মুম্বইয়ে ঢুকে শহরের নানা জায়গায় হামলা চালিয়ে ১৬৬ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছ’জন ছিলেন মার্কিন নাগরিকও, যা এই মামলায় আন্তর্জাতিক গুরুত্ব যোগ করে।
অ্যাঞ্জেলসের কারাগারে বন্দি রানা (Tahawwur Rana)
রানা আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসের একটি কারাগারে বন্দি। ভারত বহু বছর ধরে তার প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে (Tahawwur Rana)। কিন্তু বিভিন্ন আইনি জটিলতায় প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়েছে। প্রথমে নিম্ন আদালতে, পরে প্রাদেশিক আদালত এবং তার পর সান ফ্রান্সিসকোর আপিল আদালতেও রানা তার প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন। প্রতিবারই আদালত ভারতের অনুকূলে রায় দেয়। অবশেষে, গত ২৫ জানুয়ারি আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট রানাকে ভারতে পাঠানোর অনুমতি দেয়।

আরও পড়ুন: Sheikh Hasina : “চিন্তা করবেন না, আসতেছি আমি।” ভার্চুয়াল বার্তায় বললেন শেখ হাসিনা
রায় পুনর্বিবেচনা (Tahawwur Rana)
তবে এরপরও রানা ফের চেষ্টা করেন শীর্ষ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য (Tahawwur Rana)। তিনি আদালতে বলেন, তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ও মুসলিম হওয়ায় ভারতে গিয়ে ‘অত্যাচারের’ শিকার হতে পারেন। শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতও তোলেন তিনি। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সেই যুক্তি নস্যাৎ করে আবেদন খারিজ করে দেয়।

ভারতের কূটনৈতিক জয় (Tahawwur Rana)
এই ঘটনাকে ভারতের (Narendra Modi) পক্ষে একটি বড় কূটনৈতিক ও আইনি জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নয়াদিল্লি বহু বছর ধরে দাবিতে অনড় ছিল যে, ২৬/১১ হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। রানার প্রত্যর্পণ সেই প্রক্রিয়ারই একটি বড় ধাপ।

আরও পড়ুন: Yunus Letter : ট্রাম্পকে চিঠি ইউনূসের! ‘পাল্টা শুল্ক’ তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ বাংলাদেশের
হামলার স্থান পর্যবেক্ষণে রানা (Tahawwur Rana)
ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, রানা শুধু পরিকল্পনায় সাহায্যই করেননি, বরং হেডলিকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও তথ্য জোগান, যাতে সে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সফর করে হামলার স্থানগুলির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। রানার মালিকানাধীন একটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে হেডলি ভারতীয় ভিসা পেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আমেরিকার সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি (Tahawwur Rana)
২০০৮ সালের হামলার পর রানাকে নিয়ে ভারত সরকার প্রথমবার ২০১১ সালে আমেরিকার (Donald Trump) সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছিল। পরবর্তীকালে ২০২০ সালে ফের রানাকে আমেরিকার পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর থেকে তিনি লস অ্যাঞ্জেলসের জেলে বন্দি রয়েছেন।
আইনি বাধা নেই (Tahawwur Rana)
এখন প্রশ্ন উঠছে, কখন তাঁকে ভারতে আনা হবে। আইনি বাধা না থাকলেও, প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার কিছু আনুষ্ঠানিকতা ও প্রশাসনিক ধাপ এখনও বাকি। তবে আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে ভারতের মাটিতে আনা সম্ভব হবে। এই প্রত্যর্পণের পর ভারতের পক্ষ থেকে ২৬/১১ হামলার বিচার প্রক্রিয়ায় আরও গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।