ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: একজন প্রতিভাবান উঠতি টেনিস খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক সার্কিটেও পরিচিতি মিলছিল। সম্প্রতি ডাবলসে আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন সেরা ২০০-র মধ্যে। এমন এক প্রতিশ্রুতিমান তরুণী রাধিকা যাদব (Radhika Yadav), যাঁর স্বপ্ন ছিল ভারতের হয়ে বড় মঞ্চে খেলা এবং শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন খেলোয়াড় তুলে আনা। সেই রাধিকাকেই নিজের হাতে গুলি করে খুন করলেন তাঁর বাবা দীপক যাদব।
ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানার গুরুগ্রামে, বৃহস্পতিবার দুপুরে। রাধিকা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। ঠিক সেই সময় পিছন থেকে পাঁচটি গুলি চালান তাঁর বাবা দীপক। তিনটি গুলি সোজা গিয়ে লাগে রাধিকাক বুকে। রক্তাক্ত অবস্থায় রাধিকা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
খুনের নেপথ্যে প্রতিবেশীদের কটাক্ষ?
মেয়ের মৃত্যুতে পরিবারের এক সদস্য, রাধিকার কাকা কুলদীপ যাদব, থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমেই আটক করে দীপক যাদবকে। জেরায় দীপক নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। জানান, মেয়ের সাফল্য, উপার্জন, স্বাধীনতা এবং সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়তা নিয়ে গ্রামে বারবার অপমান সহ্য করতে হচ্ছিল তাঁকে।
আরও পড়ুন: Rupees 50 Coin: বাজারে আসছে ৫০ টাকার কয়েন? কী জানালো কেন্দ্র?
দীপক বলেন, “গ্রামে যখন দুধ কিনতে যেতাম, তখন সবাই বলত, আমি মেয়ের টাকায় বসে খাই। কেউ কেউ আবার আমার মেয়ের চরিত্র নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করত।” দীপকের দাবি, তিনি বহুবার রাধিকাকে (Radhika Yadav) বলেছেন তার টেনিস অ্যাকাডেমি বন্ধ করতে। কিন্তু রাধিকা তাঁর কথা শোনেননি। সেই কারণেই ক্রমাগত অপমান আর রাগে ফেটে পড়ে নিজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি ছোড়েন তিনি।
একাধিক কারণ মিলছে তদন্তে
পুলিশ আরও জানায়, কিছুদিন আগে টেনিস খেলতে গিয়ে রাধিকার (Radhika Yadav) কাঁধে চোট লাগে। বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়ই তিনি সিদ্ধান্ত নেন শিশুদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি টেনিস অ্যাকাডেমি খুলবেন। নিজের এলাকাতেই শুরু করেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু এই উদ্যোগ ভালভাবে নিতে পারেননি দীপক।
রাধিকাকে (Radhika Yadav) হারিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবার
মা মঞ্জু যাদব এখনও পুলিশকে কোনও লিখিত বয়ান দিতে চাননি। কিন্তু কাকা কুলদীপ যাদব মেয়ের মতো ভাইঝির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, “রাধিকা ছিল খুব প্রতিভাবান। ওকে নিয়ে আমাদের গর্ব ছিল। এমন ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি।”
আরও পড়ুন:Shiv Sena MLA: ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!’ ক্যান্টিন কর্মীকে বেধড়ক মারধর, বিতর্কে শিবসেনা বিধায়ক
দীপকের বক্তব্য অনুযায়ী, নিজের সম্মান বাঁচাতেই মেয়েকে হত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই সম্মান বাঁচানোর নামে একজন বাবা কীভাবে নিজের মেয়েকে খুন করতে পারেন? সামাজিক চাপ, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, ‘মেয়ের উপার্জন’ নিয়ে বিদ্রুপ, এই সবই কি এই নারকীয় হত্যার দিকে ঠেলে দিল দীপককে?