ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ আবারও প্রমাণ করছে যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতি কতটা জটিল(Thailand Cambodia Border Dispute)। পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্ত ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে এ বিরোধের শিকড় অনেক গভীরে, যা এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো ঐতিহাসিক বিরোধ থেকে উৎসারিত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট (Thailand Cambodia Border Dispute)
১৯০৪ এবং ১৯০৭ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার সীমান্ত চিহ্নিত করা হয়। তবে প্রাহ ভিহিয়ার মন্দির (Preah Vihear Temple) এবং তার সংলগ্ন এলাকা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে দাবি-দাওয়া অব্যাহত থাকে। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালত মন্দিরটিকে কাম্বোডিয়ার অধীনে ঘোষণা করলেও এর আশেপাশের ৪.৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা এখনও বিতর্কিত।
২০০৮ সালে যখন কাম্বোডিয়া প্রাহ ভিহিয়ার মন্দিরকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে উদ্যোগী হয়, থাইল্যান্ড তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এরপর থেকেই সীমান্তে একাধিকবার সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়, যেখানে সেনা ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।
সাম্প্রতিক উত্তেজনা (Thailand Cambodia Border Dispute)
২০২৫ সালের মে মাসে এক কাম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়তে থাকে(Thailand Cambodia Border Dispute)। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে—কাম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফলমূল ও সবজির আমদানি বন্ধ করে এবং বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবায়ও কড়াকড়ি আরোপ করে।
বৃহস্পতিবার থেকে সংঘাত নতুন রূপ নেয়। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে যে কাম্বোডিয়া ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালিয়েছে। অপরদিকে কাম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই সেনারা এক খমের-হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করে এবং বারবার সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করছে।

আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা (Thailand Cambodia Border Dispute)
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ান (ASEAN) বর্তমানে মালয়েশিয়ার নেতৃত্বে শান্তি আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম (Anwar Ibrahim) উভয় দেশের নেতাদের কুয়ালালামপুরে আলোচনার টেবিলে বসিয়েছেন।
একই সঙ্গে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয় হয়েছে। চীন উভয় দেশকে শান্তির পথে ফিরতে আহ্বান জানিয়েছে, আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “যতক্ষণ লড়াই চলবে, ততক্ষণ ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাও বন্ধ থাকবে।”

ভূরাজনৈতিক প্রভাব (Thailand Cambodia Border Dispute)
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘর্ষ কেবল দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং পুরো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি(Thailand Cambodia Border Dispute)। থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি এবং কাম্বোডিয়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। সীমান্তে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ বাণিজ্য রুট, পর্যটন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।
এছাড়া, চীনের অবকাঠামোগত বিনিয়োগ—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)—কাম্বোডিয়ার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে। এই বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে যদি সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা (Thailand Cambodia Border Dispute)
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বলছে, থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়ার সংঘাত সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না(Thailand Cambodia Border Dispute)। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব, তবে উভয় দেশের নেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। তবে বর্তমানে উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও জাতীয়তাবাদী মনোভাব শান্তি প্রচেষ্টাকে কঠিন করে তুলছে। বিশ্লেষকদের মতে, আসিয়ান ও চীনের কূটনৈতিক উদ্যোগ আগামী সপ্তাহের মধ্যে ফলপ্রসূ না হলে সংঘাত আরও বেড়ে পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়ার সীমান্ত বিরোধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অস্থির ভূরাজনীতির প্রতিফলন। এ সংঘাত কেবল দুই দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে কুয়ালালামপুরের আলোচনার দিকে, যা হয়তো স্থায়ী সমাধানের পথে প্রথম ধাপ হতে পারে।