ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাত থামাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী সোমবার মালয়েশিয়ায় এক বৈঠকে বসছেন(Thailand Cambodia Ceasefire Talks)। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে থাইল্যান্ডের ১৩ জন সাধারণ নাগরিক ও কাম্বোডিয়ার ৮ জন।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় । মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ান (ASEAN) আঞ্চলিক জোটের চেয়ারপার্সন দেশ হিসেবে মধ্যস্থতা করছে। থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ব্যাংককের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন, আর কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত কুয়ালালামপুরে বৈঠকে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছে মালয়েশিয়ার প্রশাসন।
সংঘাতের পটভূমি (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের বিবাদ আবারও জ্বলে উঠেছে(Thailand Cambodia Ceasefire Talks)। গত এক সপ্তাহ ধরে উভয় দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে গোলাবর্ষণের অভিযোগ করছে। এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘাত।
সীমান্তে এই অচলাবস্থা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন এবং কুয়ালালামপুরে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন,“আসিয়ান অঞ্চল শান্তিপূর্ণ রাখতে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়া সমাধান অসম্ভব।”
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
সংঘাত থামাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প(Donald J. Trump)। রবিবার স্কটল্যান্ডের টার্নবেরিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন-এর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান,“আমি দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয় ফোনালাপের পর তারা আলোচনায় বসতে আগ্রহী হয়েছে।”
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি সংঘাত না থামে তবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উভয় দেশের ভবিষ্যতের বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করা হবে।

নতুন হামলার অভিযোগ (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
তবে আলোচনার আগের দিন, রবিবারও উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে আর্টিলারি হামলার অভিযোগ করেছে। সীমান্ত এলাকায় নতুন করে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এই অভিযোগ উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।
বৈঠকের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
আজকের বৈঠকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং দীর্ঘমেয়াদি সীমান্ত সমাধানের রূপরেখা তৈরির উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়ার নিরপেক্ষ ভূমিকা আলোচনাকে সফল করতে সহায়ক হতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আনন্দ রাহমান বলেন,“আসিয়ান শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতা দুই দেশকেই আলোচনায় আনতে সহায়তা করছে।”

আরও পড়ুন: Modi Maldives Visit : মালদ্বীপ সফরে মোদী!৪,৮৫০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা ঘোষণা
আসিয়ানের ভূমিকা (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
২০০৮ এবং ২০১১ সালেও থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তে সংঘাত দেখা দিয়েছিল। তখনও আসিয়ানের মাধ্যমে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছিল। এবারও আঞ্চলিক এই জোটকে নিরপেক্ষ আলোচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মানবিক সংকটের শঙ্কা (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
সংঘাতের ফলে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শত শত পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলির মতে, যদি দ্রুত যুদ্ধবিরতি না হয়, তবে একটি মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ (Thailand Cambodia Ceasefire Talks)
আজকের বৈঠকের ফলাফল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনায় যদি কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তবে তা ভবিষ্যতের সীমান্ত নির্ধারণ প্রক্রিয়ার ভিত্তি গড়তে পারে।