Last Updated on [modified_date_only] by Anustup Roy Barman
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট এবং কামানের গোলা (Thailand-Cambodia Clash) নিক্ষেপ করলে এবং থাই সামরিক বাহিনী বিমান হামলা চালানোর জন্য F-16 জেটগুলিকে ঝাঁপিয়ে পড়লে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়।
প্রাচীন মন্দির ঘিরে সীমান্ত সংঘাতে নতুন রূপ (Thailand-Cambodia Clash)
থাইল্যান্ড বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে (Thailand-Cambodia Clash)। এর আগে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট ও গোলাবর্ষণ করে, যার ফলে একজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন। বহুদিনের পুরনো সীমান্ত বিবাদ হঠাৎ করেই ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নেয়। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে ‘এমারাল্ড ট্রায়াঙ্গেল’ নামে পরিচিত এলাকাকে কেন্দ্র করে এই বিবাদ বহু বছর ধরে চলছে। এই অঞ্চলেই থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত মিলেছে। এলাকাটিতে রয়েছে একটি বহু প্রাচীন মন্দির। এই বিরোধ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে একাধিকবার। মে মাসেও এক কম্বোডিয়ান সেনা গুলির লড়াইয়ে নিহত হন।
যুদ্ধ পরিস্থিতি: যুদ্ধবিমান বনাম রকেট (Thailand-Cambodia Clash)
বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি ফের খারাপ হয় (Thailand-Cambodia Clash)। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট ও আর্টিলারি শেল ছোঁড়ে। থাই সেনা পাল্টা পদক্ষেপে ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ওড়ায়। ইউবন রাতচাথানি প্রদেশ থেকে ওড়া বিমান দুটি কম্বোডিয়ান সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। থাই প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানায়, একটি কম্বোডিয়ান গোলা সীমান্তের এপারে একটি বাড়িতে পড়ে। এতে এক সাধারণ মানুষ মারা যান। আহত হন তিনজন, যার মধ্যে এক শিশু রয়েছে।
দোষারোপের পালা (Thailand-Cambodia Clash)
দুই দেশই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। সংঘর্ষ শুরু হয় থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশ ও কম্বোডিয়ার ওড্ডার মিনচে প্রদেশের মাঝে, দুটি মন্দিরের কাছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র মালি সোচেতা এক বিবৃতিতে বলেন, “থাই সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। তারা কম্বোডিয়ান বাহিনীর ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। কম্বোডিয়ান বাহিনী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে জবাব দিয়েছে।” থাই সেনাবাহিনী দাবি করেছে, প্রথমে কম্বোডিয়ার সৈনিকরাই হামলা চালায়। তারা জানায়, কম্বোডিয়ার দুটি BM-21 রকেট সুরিনের কাপ চিয়েং জেলার একটি বসতি লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। এতে তিনজন আহত হন।
আরও পড়ুন: Russian Plane Missing: রাশিয়ায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, খোঁজ মিলল ধ্বংসাবশেষের!
সংঘর্ষের শুরু কোথা থেকে
থাই সেনাবাহিনীর দাবি, সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে তাদের তাল মিউন মন্দির পাহারায় থাকা সেনাদের ওপর কম্বোডিয়ার একটি ড্রোন দেখতে পায়। পরে ছয়জন সশস্ত্র কম্বোডিয়ান সৈনিক, যাদের একজনের হাতে ছিল রকেট লঞ্চার, থাই পোস্টের কাঁটাতারের কাছে চলে আসে। থাই সৈনিকরা সতর্কবার্তা দিলে, সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কম্বোডিয়ান বাহিনী মন্দিরের পূর্বদিকে গুলি চালায়। থাই পোস্ট থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে এই হামলা হয়।
কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও যুদ্ধপ্রস্তুতি
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, “এই পরিস্থিতির মোকাবিলা সতর্কভাবে করতে হবে। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক আইনের ভিতরে থেকেই কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।” থাইল্যান্ডের দূতাবাস ফেসবুক পোস্টে থাই নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব কম্বোডিয়া ছেড়ে চলে আসতে বলেছে, যদি না জরুরি কারণ থাকে।
দূতাবাস বহিষ্কার ও কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনমন
এই সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টা আগে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজেদের দূতকে ফিরিয়ে আনে। এর কারণ, থাই সেনার পাঁচ সদস্য ল্যান্ডমাইনে আহত হন। থাই সেনার তদন্তে জানা যায়, কম্বোডিয়া নতুন করে মাইন বসিয়েছে—যা ফনম পেন খণ্ডন করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে কম্বোডিয়া জানায়, তারা থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘সর্বনিম্ন স্তরে’ নামিয়ে এনেছে। তারা একমাত্র একজন ছাড়া সব থাই কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা
দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপও বেড়েছে। থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন চিনাওয়াত্রা সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নৈতিক আচরণ লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তাধীন। একটি কূটনৈতিক ফোনালাপ, যেখানে পেতংতার্ন ও প্রাক্তন কম্বোডিয়ান শাসক হুন সেনের কথোপকথন ছিল, ফাঁস হয়ে যায়। এরপর কম্বোডিয়ায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। এই ঘটনার মধ্যেই কম্বোডিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর থেকে সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ শুরু হবে। বহুদিন আগে প্রণীত একটি খসড়া আইন কার্যকর করার কথা ঘোষণা করেন তিনি।