ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড এবং কাম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাত থামাতে সোমবার শুরু হলো শান্তি বৈঠক (Thailand Cambodia Peace Talks)। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকারি বাসভবন পুত্রজায়ায় এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন থাই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই এবং কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। গত পাঁচ দিনে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৪ জন সাধারণ মানুষ। কাম্বোডিয়া এখনও সরকারি ভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
বৈঠকটি স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় শুরু হয়েছে। আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন মার্কিন ও চীনা প্রতিনিধি দলও। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দুই দেশের নেতারা আলোচনার টেবিলে বসেছেন, কারণ সীমান্তে সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই দশ-হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
চীনের মধ্যস্থতার আহ্বান (Thailand Cambodia Peace Talks)
চীন, যা দুই দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে, সংঘাত বন্ধে সমর্থন জানিয়েছে (Thailand Cambodia Peace Talks)। বেইজিংয়ের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন,“আমরা আশা করি, দুই দেশ শান্তি ও সৌহার্দ্যের মানসিকতা বজায় রেখে সংযত হবে এবং জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে দ্রুত সংঘাতের অবসান ঘটাবে।”
মার্কিন বার্তা ও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি (Thailand Cambodia Peace Talks)
সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার তিনি বলেছেন, “যদি সংঘাত বন্ধ না হয়, ওয়াশিংটন কোনও বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রসর হবে না। যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন এখনই।” মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো সরাসরি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের অবসান চায় “যত দ্রুত সম্ভব”।

সংঘাতের পটভূমি (Thailand Cambodia Peace Talks)
থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস দীর্ঘ (Thailand Cambodia Peace Talks)।। ফরাসি উপনিবেশের সময় দুই দেশের সীমান্ত নির্ধারণের পর থেকেই বিতর্ক শুরু। ২০০৮ সালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন কাম্বোডিয়া একটি ১১শ শতকের মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে চায়। থাইল্যান্ডের বিরোধিতায় তখন সংঘর্ষ শুরু হয়, যা উভয় দেশের সেনা ও সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানির কারণ হয়েছিল।
বর্তমান সংঘাতের সূত্রপাত মে মাসে, যখন এক কাম্বোডিয়ান সেনা সীমান্তে নিহত হয়। এরপর থেকে উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং গত বৃহস্পতিবার থেকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি গোলাগুলি শুরু হয়। থাইল্যান্ড কাম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে রকেট হামলার অভিযোগ করেছে, অন্যদিকে কাম্বোডিয়ার দাবি, থাই বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি (Thailand Cambodia Peace Talks)
গত পাঁচ দিনের সংঘর্ষে দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটেছে (Thailand Cambodia Peace Talks)। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো খালি হয়ে গেছে, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাসাঠাসি করে দিন কাটাচ্ছে। উদ্ধারকর্মীদের মতে, দ্রুত যুদ্ধবিরতি না হলে সীমান্তে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হবে।
শান্তি আলোচনার লক্ষ্য (Thailand Cambodia Peace Talks)
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম (Anwar Ibrahim) আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন (Thailand Cambodia Peace Talks)।। আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো,
- তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
- সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত যৌথ ব্যবস্থা
- মানবিক সহায়তা ও শরণার্থী পুনর্বাসন
- সীমান্ত বিরোধের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের রূপরেখা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আলোচনায় প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তবে আসিয়ানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা একটি বড় সাফল্য অর্জন করবে। তবে উভয় দেশের বিশ্বাসঘাটতি এবং অতীত ইতিহাসের কারণে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে কি না, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।