ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মোড়? অন্তত সেটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা, যখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির এক নজিরবিহীন একান্ত বৈঠকে মিলিত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে (Trump Munir Meeting)। এই বৈঠক প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে, যা পূর্ব নির্ধারিত এক ঘণ্টার সময়সীমা ছাড়িয়ে যায়।
ট্রাম্প মুনিরের বৈঠক (Trump Munir Meeting)
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (ISPR) জানিয়েছে, বুধবারের এই বৈঠক প্রথমে হোয়াইট হাউজের ক্যাবিনেট রুমে মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে শুরু হয় এবং পরে তা ওভাল অফিসে গিয়ে শেষ হয় (Trump Munir Meeting)। যদিও বৈঠকের সময় কোনও সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এবং হোয়াইট হাউজ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও দেওয়া হয়নি, তবু ট্রাম্প (Donald J. Trump) সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে “সম্মানিত” বোধ করছেন।
ইরান-ইজরায়েল সংঘাত নিয়ে বৈঠকে ট্রাম্প (Trump Munir Meeting)
বৈঠকে ট্রাম্প ইরান-ইজরায়েল সংঘাত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, পাকিস্তান “ইরানকে খুব ভাল জানে”, এবং এই পরিস্থিতি নিয়ে তারা “খুশি নয়” (Trump Munir Meeting)। বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য পাকিস্তানের সামনে কূটনৈতিক ভারসাম্যের এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে। একদিকে চীন, অন্যদিকে আমেরিকা—এই দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এখন ইসলামাবাদের কৌশলগত লক্ষ্য। ISPR-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে দুই নেতা “পরমাণু, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনিজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও উদীয়মান প্রযুক্তি”-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে একই সঙ্গে ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত নিয়েও “বিশদ আলোচনা” হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন দুই পক্ষ।

আরও পড়ুন:California Unrest : ন্যাশনাল গার্ড নামিয়ে ভুল করেননি ট্রাম্প, জানাল মার্কিন ফেডেরাল আপিল আদালতের
বৈঠকে কে কে উপস্থিত ছিলেন? (Trump Munir Meeting)
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক এবং আমেরিকার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ আলোচক স্টিভ উইটকফ (Trump Munir Meeting)।পর্যালোচকদের মতে, যদিও বৈঠকটি গণমাধ্যমের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়, তবু এটি দুই দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে। স্টিমসন সেন্টার-এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড বলেন, “এই বৈঠক পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিকভাবে বড় প্রাপ্তি। মুনির এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছেন।” তবে সবাই এতটা আশাবাদী নন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক সহর খান বলেন, “এটি সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত দিলেও, বন্ধুত্বের নিশ্চয়তা নয়। পাকিস্তানকে এখন বাস্তবসম্মত অবস্থান নিতে হবে।”

আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা (Trump Munir Meeting)
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীন এবং ইসলামিক প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা কঠিন হবে (Trump Munir Meeting)। ইরানে সাম্প্রতিক ইজরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সেনা কর্তা মোহাম্মদ বাঘেরি, যাঁর সঙ্গে কিছুদিন আগেই মুনির সাক্ষাৎ করেছিলেন।ইরান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানে ১৫–২০ শতাংশ শিয়া জনসংখ্যা রয়েছে, যারা ইরানের সঙ্গে ধর্মীয়ভাবে সম্পৃক্ত। ফলে কোনও প্রকার আমেরিকাপন্থী অবস্থান ইসলামাবাদের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দিক থেকেও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। অতএব, সাম্প্রতিক এই বৈঠক সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিলেও, ইসলামাবাদকে এখন বড় কূটনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে—চীন, ইরান ও আমেরিকার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করেই আগাতে হবে ভবিষ্যতের পথ।