ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির খবরের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে (Trump on trade deal with India) ট্রাম্প চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির বিশদ বিবরণ বা ভারতের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরু (Trump on trade deal with India)
জুলাই ৯-এর শেষ সময়সীমার আগে পারস্পরিক শুল্ক বিরতির বিষয়ে চূড়ান্ত রাউন্ডের বৈঠকে অংশ নিতে শুক্রবার ভারতীয় বাণিজ্য আলোচকরা আমেরিকায় পৌঁছেছেন (Trump on trade deal with India)। এর মধ্যেই হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি “বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি” স্বাক্ষর হতে পারে, যার ফলে “ভারতকে খুলে দেওয়া” সম্ভব হবে। ট্রাম্প বলেন, “সবাই একটা চুক্তি করতে চায়, অংশ হতে চায়। আমরা গতকালই চীনের সঙ্গে একটা চুক্তি সই করেছি। দারুণ কিছু চুক্তি হচ্ছে। হয়তো ভারতের সঙ্গেও একটা আসছে। খুব বড় একটা। যেখানে আমরা ভারতকে খুলে দিতে যাচ্ছি। যেমনটা চীনের ক্ষেত্রেও করছি।”
তিনি আরও বলেন, “সব দেশের সঙ্গে আমরা চুক্তি করব না। কিছু ক্ষেত্রে শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠাব… আমার লোকেরা সেটা চায় না। তারা আমার চেয়ে অনেক বেশি চুক্তি করতে চায়।”
কৃষিপণ্য ও শুল্ক ইস্যুতে চাপ (Trump on trade deal with India)
এই চূড়ান্ত বৈঠকের গুরুত্ব অনেক (Trump on trade deal with India)। আগের রাউন্ডে তেমন অগ্রগতি হয়নি। কৃষি এবং অন্যান্য স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে। এক সূত্র জানিয়েছে, “এই অবস্থান চূড়ান্ত আলোচনার উপর চাপ সৃষ্টি করবে, যেখানে ভারতের উপর আমেরিকার দাবিগুলি মেনে নেওয়ার চাপ বাড়বে, যদি ভারত পারস্পরিক শুল্ক আরোপ এড়াতে চায়।”
আরও পড়ুন: Maharashtra: ভাষা প্রতিবাদের পরিধি বাড়ছে! মহারাষ্ট্রে উদ্ধব-রাজ পুনর্মিলনের ইঙ্গিত
বাণিজ্য চুক্তিতে বাধা (Trump on trade deal with India)
এই বাণিজ্য চুক্তিতে মূল বাধা হলো আমেরিকা ভারতের বেশ কিছু অ-শুল্ক প্রতিবন্ধকতা ও উচ্চ শুল্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এখনো সম্মতি দেয়নি। বিশেষ করে, আমেরিকার এখন কার্যকর ট্রেড প্রোমোশন অথরিটি (TPA) নেই। যার ফলে বর্তমান প্রশাসন আইনত শুল্ক কমাতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে আলোচনার পরিধি কেবলমাত্র নির্বাহী স্তরে বর্তমান প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। ফলে চুক্তির দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
কৃষিপণ্য রফতানির দিকে নজর
এই প্রস্তাবিত চুক্তির অধীনে আমেরিকা চায় তার কৃষিপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ। বিশেষত সোয়া ও কর্ন—যা তারা চীনে প্রচুর রফতানি করে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি এই পণ্যের জন্য বিকল্প বাজার তৈরি করবে বলে আশা করছে আমেরিকা। এছাড়া আপেল রফতানির ক্ষেত্রেও সুবিধা চাইছে তারা। নিতি আয়োগের এক কর্মপত্রে বলা হয়েছে, ভারতে সোয়াবিন তেলের আমদানিতে কিছু ছাড় দেওয়া যেতে পারে, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যায়। এতে ঘরোয়া উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না। ভারতে ভোজ্যতেলের আমদানি বিশ্বে সর্বোচ্চ, অন্যদিকে আমেরিকার সোয়াবিন তেলের উৎপাদন অতিরিক্ত।
তেলের আমদানি ও প্রতিরক্ষা ক্রয়েও নজর
ভারতের সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তেল ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনাটা কৌশলগত প্রয়োজন। আমেরিকা থেকে এই পণ্য কেনা বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করতে পারে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারতের তেল আমদানি নির্ভরতা ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে। সেইসঙ্গে পরিশোধন ক্ষমতাও বেড়েছে। সরকারি বাণিজ্য পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ভারতের মার্কিন তেল আমদানি ২০২৫ সালের মার্চে ১১.৪৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি কতটা দ্রুত এবং কতটা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার।