ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আধুনিক বিশ্বে অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির দ্বৈরথ নতুন কোনো বিষয় নয় (Trump Targets Chinese Military)। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলতে থাকা শুল্কযুদ্ধ তা এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক নয়, এই সংঘাত এখন ভূরাজনীতি, প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।
বিশ্ববাজারে চিনের প্রভাব (Trump Targets Chinese Military)
বিশ্ববাজারে আজ চিন এক অন্যতম প্রধান রফতানিকারক দেশ (Trump Targets Chinese Military)। বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার চীনের জন্য বিশাল এক আয়ের উৎস। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ—এই বিপুল অর্থ ব্যবহার করে বেজিং গড়ে তুলছে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, যার একটি বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে মার্কিন অর্থে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) একাধিকবার বলেছেন, “আমরা চিনকে আর আমাদের টাকায় ফৌজ গড়তে দেব না।”
শুল্কযুদ্ধ (Trump Targets Chinese Military)
এই যুক্তির ভিত্তিতেই শুরু হয় ‘শুল্কযুদ্ধ’ (Trump Targets Chinese Military)। ২০২৫ সালে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু চীনা পণ্যে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপায়, যার ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ১২৫ শতাংশে। এর আগে ২ এপ্রিল ঘোষিত নীতিতে শুল্ক ছিল ৩৪ শতাংশ। পাল্টা চীনও আমেরিকান পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ট্রাম্প তখন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) কে হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আরও কড়াকড়ি করা হবে।

বেজিং-এর বক্তব্য (Trump Targets Chinese Military)
কিন্তু চীন মাথা নোয়ায়নি। বেজিং-এর বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ব্ল্যাকমেল করছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। চীনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান পরিষ্কার বলেন, “আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। এই পথেই আমরা চলব না।” শুধু কথার পাল্টা নয়, আমেরিকার সামরিক নীতির বিরুদ্ধে প্রচারমূলক ভিডিও প্রকাশ করে চীন বিশ্বজনমতকেও প্রভাবিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স (Trump Targets Chinese Military)
এই অর্থনৈতিক যুদ্ধের অন্তরালে রয়েছে এক গভীর প্রতিরক্ষা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’ অনুযায়ী, আমেরিকা এখনো সামরিক শক্তিতে শীর্ষে থাকলেও চীন দ্রুত উঠে আসছে দ্বিতীয় স্থানে। চীনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’-তে বর্তমানে সৈন্য সংখ্যা ৩১ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি। রণতরী সংখ্যায় তারা ইতিমধ্যেই আমেরিকাকে পেছনে ফেলেছে। ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করে চীন দেখিয়েছে, তারা প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে নেই।
আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী (Trump Targets Chinese Military)
চীন শুধু বাহ্যিক শক্তিতে সীমাবদ্ধ নেই (Trump Targets Chinese Military)। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে আমেরিকার। অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকেও চীনের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে তাদের হাতে ৬০০-র বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, এবং এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি।
বিকল্প বাজারে প্রবেশ (Trump Targets Chinese Military)
এত কিছুর পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়—এই শুল্কযুদ্ধে আদৌ কেউ জিততে পারবে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক যুদ্ধ সাময়িকভাবে চীনকে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ফেলতে পারে ঠিকই, কিন্তু PLA-কে ধ্বংস করা বা বেজিংকে কূটনৈতিকভাবে পুরোপুরি কোণঠাসা করা সম্ভব নয়। কারণ, চীনের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি, বিকল্প বাজারে প্রবেশ এবং নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা তাদের শক্তিশালী করে রেখেছে।
আমেরিকার ভাবমূর্তি (Trump Targets Chinese Military)
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রকেও ভাবতে হবে—এই শুল্কনীতি বিশ্ববাজারে আমেরিকার ভাবমূর্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় কী প্রভাব ফেলছে। চীনকে কোণঠাসা করতে গিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে কি তারা একঘরে হয়ে পড়ছে?শেষ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে, শুল্কযুদ্ধ শুধু আমদানি-রফতানির হিসাব নয়, বরং আধিপত্য বিস্তারের এক কৌশল। কে সফল হবে—তা সময়ই বলবে, তবে এই সংঘাত বিশ্বব্যবস্থাকে যে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।