ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুত শুল্ক কার্ড (Trump vs Columbia) ব্যবহার করে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পথে প্রথম বড় পদক্ষেপ নিলেন। তবে তার এই রোষের লক্ষ্য ছিল না চীন, মেক্সিকো বা কানাডা। বরং দক্ষিণ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র কলম্বিয়া।
কলম্বিয়ার সঙ্গে সংঘাতের কারণ (Trump vs Columbia)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুইটি সামরিক বিমান কলম্বিয়ার (Trump vs Columbia) নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো সামরিক বিমানে প্রেরিত নাগরিকদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তারা শুধুমাত্র নাগরিকদের “মর্যাদার সঙ্গে” গ্রহণ করবেন, যা হবে সাধারণ বিমানের মাধ্যমে।
এই ঘটনাই ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কলম্বিয়ার (Trump vs Columbia) বিরুদ্ধে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, যা দ্রুত ৫০ শতাংশে বাড়তে পারে। এছাড়াও কলম্বিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বাতিলের কথা ঘোষণা করেন।
কলম্বিয়ার পিছু হঠা (Trump vs Columbia)
প্রথমে কলম্বিয়া (Trump vs Columbia) পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও, দিন শেষে কলম্বিয়ার বিদেশমন্ত্রী লুইস গিলবার্তো মুরিয়ো জানান যে, তারা “অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠেছে” এবং ফেরত পাঠানো নাগরিকদের গ্রহণ করবে।
ট্রাম্পের বার্তা বিশ্বকে
ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। কিন্তু কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক হুমকি দেখিয়ে তিনি বিশ্বকে সতর্ক করে দিলেন যে, তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সহযোগিতা না করলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আজকের ঘটনা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল যে আমেরিকা আবারও সম্মানিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রত্যাশা করেন যে অন্য দেশগুলো অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।”
ট্রাম্পের কড়া বার্তা
এই পুরো ঘটনায় ট্রাম্প একটি ফেডোরা টুপি পরা নিজের ছবি ট্রুথ সোশ্যাল-এ শেয়ার করেন। ছবির পাশে লেখা ছিল “FAFO”। এই শব্দগুচ্ছের অর্থ “F*** Around, Find Out”, যা সাধারণত সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কলম্বিয়ার প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
যদিও কলম্বিয়া শেষপর্যন্ত পিছু হটে, প্রেসিডেন্ট পেত্রো ট্রাম্পকে কড়া ভাষায় জবাব দেন। এক্সে লেখা একটি পোস্টে তিনি ট্রাম্পের নীতিকে সমালোচনা করেন এবং বলেন যে, “লোভের কারণে তিনি মানবজাতিকে ধ্বংস করতে চান।”
প্রেসিডেন্ট পেত্রো আরও জানান, যদি ডারিয়েন গ্যাপ অঞ্চল দিয়ে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে আলোচনা স্থগিত হয়, তাহলে “অবৈধ কার্যক্রম বাড়বে”। তিনি বলেন, “আজ থেকে কলম্বিয়া সারা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত,” যা নতুন অবৈধ অভিবাসনের ইঙ্গিত হতে পারে।
শুল্ক হুমকির সম্ভাব্য প্রভাব
যদি ট্রাম্প তার শুল্ক হুমকি কার্যকর করেন, তাহলে এর প্রভাব মার্কিন ক্রেতাদের উপরও পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র তার মোট কফির ২৭ শতাংশই কলম্বিয়া থেকে আমদানি করে, যার মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। কলম্বিয়া থেকে আমদানি করা অন্যান্য পণ্য যেমন কলা, অপরিশোধিত তেল, অ্যাভোকাডো এবং ফুলের উপরও প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন: Yoon Suk Yeol: সামরিক আইন এনে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ, অভিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার ধৃত প্রেসিডেন্ট
কলম্বিয়া তাদের মার্কেট হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়বে, যা তাদের উৎপাদকদের উপর চাপ বাড়াবে। পাশাপাশি, এটি ইতিমধ্যেই সংকটাপন্ন বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করতে পারে।
জটিল হবে সম্পর্ক
এই ঘটনার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতি নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।