ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: খালিস্তানি উৎখাতে কানাডার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী(Canada)।সোমবার আয়ারল্যান্ডের কর্কে অবস্থিত আহাকিস্তা মেমোরিয়ালে কানিষ্কা বোমা হামলার শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। আর সেখানে দাঁড়িয়েই কানাডার প্রতি সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও গভীর করার আহ্বান জানিয়েছেন।যা বর্তমান ভারত-কানাডা সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের মূল্যবান বন্ধু কানাডা (Canada)
কানাডাকে ভারতের মূল্যবান বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এই সহযোগিতার ভিত্তি(Canada)। এই মন্তব্য তিনি ১৯৮৫ সালের ২৩ জুন কানাডা-ভিত্তিক খালিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী বব্বর খালসা দ্বারা সংঘটিত এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২-এর বোমা হামলার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে করেন, যাতে ৩২৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।হরদীপ সিং পুরী বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের ভাগাভাগি দায়িত্বের কথা স্মরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষ করে আমি আমাদের কানাডিয়ান বন্ধুদের কাছে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা গভীর করার আহ্বান জানাচ্ছি। কানাডা ভারতের মূল্যবান অংশীদার এবং বন্ধু।আমরা প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভাগ করে নিই এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য দ্বারা আমরা একত্রিত।’

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই (Canada)
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসা ও চরমপন্থী কণ্ঠস্বর আশ্রয় পায় এবং সন্ত্রাসের মহিমাকীর্তন করে, তখন তারা কেবল ব্যক্তির জীবনই কেড়ে নেয় না, সমাজের সামগ্রিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলে(Canada)।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তথ্য আদান-প্রদান, অর্থায়নের চ্যানেল বন্ধ করা এবং র্যাডিক্যালাইজেশনের বিরুদ্ধে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘একসঙ্গে কাজ করে, তথ্য ভাগ করে, অর্থের উৎস বন্ধ করে এবং র্যাডিক্যালাইজেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, যারা ঘৃণা ও সন্ত্রাসের প্রচার করে তারা সফল হতে পারবে না।ভারত এই ক্ষেত্রে আরও কাজ করতে প্রস্তুত।’ কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক বৈঠকে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে হরদীপ সিং পুরী বলেন, ‘নতুন কানাডিয়ান সরকারের সঙ্গে আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’

আরও পড়ুন-US: বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা! আমেরিকা নিয়ে উলটপুরাণ পাকিস্তানের, সরব ‘মিত্র’রা
কানিষ্কা বোমা হামলা (Canada)
কানিষ্কা বোমা হামলা, যা ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২-এ সংঘটিত হয়েছিল, কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচিত। এই হামলায় ২৬৮ জন কানাডিয়ান, ২৭ জন ব্রিটিশ এবং ২৪ জন ভারতীয় নাগরিকসহ মোট ৩২৯ জন প্রাণ হারান।এই ঘটনার পিছনে দায়ী বব্বর খালসা নামক খালিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা তালবিন্দর সিং পরমারের নাম উঠে আসে। ভারত বারবার কানাডার কাছে এই ধরনের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে খালিস্তানি ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বজায় রয়েছে।হরদীপ সিং পুরির নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল এই স্মরণসভায় অংশ নিয়েছিল। এই স্মরণসভা কেবল নিরীহ শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংহতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার একটি মঞ্চ হিসেবেও কাজ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-কানাডা সম্পর্ক খালিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন-Oil Prices: ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে আমেরিকার এন্ট্রি! পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ তেলের দাম
ভারত-কানাডা সম্পর্ক (Canada)
২০২৩ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় নিজ্জরের হত্যার জন্য কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন, যা ভারত তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে(Canada)। এই ঘটনার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়।তবে সম্প্রতি কানাডার নতুন কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ফের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে।কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে মোদী-কার্নির বৈঠক এবং উচ্চ কমিশনার পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত এই দিকে ইঙ্গিত দেয়। তবে, খালিস্তানি ইস্যু এখনও দুই দেশের সম্পর্কের একটি স্পর্শকাতর বিষয়। হরদীপ সিং পুরীর এই বক্তব্য এই প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
