ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে মার্কিন হামলা আদৌ কতটা সফল হয়েছে? প্রশ্নটা এখন শুধু ইরান বা আন্তর্জাতিক মহলে নয়, বরং বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে ওয়াশিংটনেই (US Attack In Iran)। একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) ও তাঁর প্রশাসনের দাবি—“তিনটি পরমাণুকেন্দ্র সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে”। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সংস্থার অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে—“না, এতটা নয়! ইরানের ইউরেনিয়াম মজুত এবং সেন্ট্রিফিউজ এখনও কার্যত অক্ষত”।
কী হয়েছিল রবিবার ভোরে? (US Attack In Iran)
রবিবার (ভারতীয় সময়) ভোরে আমেরিকার বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানের বহর ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র—ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান—এর উপর ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা বর্ষণ করে (US Attack In Iran)। এই অত্যাধুনিক বোমাগুলি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি ছিল, এই আক্রমণে “ইরানের পরমাণু কর্মসূচি চিরতরে শেষ”।
কিন্তু ফাঁস হল ভিন্ন ছবি(US Attack In Iran)
সিএনএন এবং রয়টার্সের রিপোর্ট বলছে, পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা এবং ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) যৌথ মূল্যায়নে (US Attack In Iran) দেখা গিয়েছে—
- ইউরেনিয়ামের মজুত ধ্বংস হয়নি, কারণ আগেই অনেকটা সরিয়ে ফেলেছিল ইরান।
- সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রগুলি বেশিরভাগই অক্ষত, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
- হামলায় পরিকাঠামোগত কিছু ক্ষতি হলেও পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি থামেনি, কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ট্রাম্পের জবাব,‘ভুয়ো’ রিপোর্ট (US Attack In Iran)
এই রিপোর্ট সামনে আসতেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প(US Attack In Iran)। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ পোস্ট করে লেখেন—
“ইরান ও ইজ়রায়েল যুদ্ধ থামাতে চেয়েছিল। আমি তাদের পারমাণবিক পরিকাঠামো ধ্বংস করেছি, তারপর যুদ্ধবিরতি হয়েছে—এটাই আসল সত্য।”
হোয়াইট হাউসও ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন করে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক বিবৃতিতে বলেন—
“ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা মূল্যায়ন ভুল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমাদের সাহসী সেনাদের অসম্মান করা হয়েছে।”

ইরান কী বলছে?(US Attack In Iran)
তেহরানের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পর্যন্ত পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস নিয়ে বিশদ কিছু জানানো হয়নি (US Attack In Iran)। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক দাবি করেছে, মূল যন্ত্রাংশ ও ইউরেনিয়াম মজুত নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। হামলার সময় যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা “গুরুতর নয়” বলেই দাবি তাদের।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া (US Attack In Iran)
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এখনও সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি, তবে একটি প্রযুক্তি-পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ‘Nuclear Watchdog Initiative’ বলেছে—
“এই হামলা হয়তো কিছুটা পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে, তবে ইরানের পরমাণু ক্ষমতা পুরোপুরি অটুট রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস, যুদ্ধবিরতি কার্যকর (US Attack In Iran)
একদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের জোরালো দাবি, “পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস, যুদ্ধবিরতি কার্যকর।” অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার সংযত মূল্যায়ন: “ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কেবল সাময়িকভাবে থমকে গেছে।” এই দ্বন্দ্ব কেবল তথ্যগত নয়—এটি রাজনৈতিকও। কারণ, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মুখে ট্রাম্পের যুদ্ধনীতি ও পররাষ্ট্র সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার প্রভাব সরাসরি ভোটে পড়তে পারে। তবে যে কোনও মতেই এখনো প্রশ্ন রয়েই গেল, ইরানের পরমাণু অস্ত্র স্বপ্ন কি শেষ, নাকি শুধু ঘুমোচ্ছে?