ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার আকাশপথে হামলার পরে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে(US Attack On Iran)। তেহরান দাবি করেছে, জনগণ নিরাপদে রয়েছেন, কোথাও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রমাণ মেলেনি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ বলছে, বাস্তব চিত্র অনেক বেশি উদ্বেগজনক। রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) আমেরিকার বোমারু বিমানের টার্গেট ছিল ইরানের নাতান্জ, ফোরডো এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্র। এই তিনটি কেন্দ্রই ইরানের পরমাণু শক্তি কর্মসূচির মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত।
উপগ্রহচিত্রে নাতান্জের ধ্বংস (US Attack On Iran)
নাতান্জ পরমাণুকেন্দ্রের সাম্প্রতিক উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে ম্যাক্সার টেকনোলজিস এবং প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি(US Attack On Iran)। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে সংবাদসংস্থা এপি জানিয়েছে, হামলার পরে মাটির নিচে অন্তত একটি ১৬ ফুট (প্রায় ৫ মিটার) গভীর গহ্বর তৈরি হয়েছে। গর্তটি ভূগর্ভস্থ কনক্রিট স্ট্রাকচারে তৈরি হওয়া বিস্ফোরণের ফল বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও ইরান সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইতিপূর্বে ২০২০ সালে ইজরায়েলও এই কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল। তখন মাটির উপর নির্মিত ‘সেন্ট্রিফিউজ হল’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরেনিয়াম পরিশোধনের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সেই হল ছিল ইরানের অন্যতম গর্ব। সম্প্রতি হওয়া হামলায় সেই ভূগর্ভস্থ কাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত, তা স্পষ্ট না হলেও উপগ্রহচিত্রে ধ্বংসস্তূপ ও গহ্বরের উপস্থিতি ইঙ্গিতবাহী।
ফোরডোতেও বিস্ফোরণের চিহ্ন (US Attack On Iran)
ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুকেন্দ্র ফোরডোর উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে ধরা পড়েছে, হামলার পরে সেখানে একাধিক প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে(US Attack On Iran)। প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি-র প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক সময়ের বাদামি রঙের পাহাড় আংশিক ধূসর হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের কারণে ওই অংশ ধূলায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এ ছাড়া ছবিতে হালকা ধোঁয়ার অস্তিত্বও দেখা গিয়েছে। ফোরডো হল একটি গোপন ঘাঁটি, যেখানে উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ হয় বলে আন্তর্জাতিক মহলের দাবি। এই হামলার পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) নিজের সমাজমাধ্যমে লেখেন, “ফোরডো শেষ!”—যা হামলার ভয়াবহতা বোঝাতে যথেষ্ট।

ইসফাহানের ক্ষয়ক্ষতির খবর অস্পষ্ট (US Attack On Iran)
তৃতীয় কেন্দ্র ইসফাহানেও হামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট উপগ্রহচিত্র প্রকাশ পায়নি(US Attack On Iran)। যদিও ইরান সরকার জানিয়েছে, সেখানেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং তেজস্ক্রিয়তা মাপার সেন্সরে কোনো বিপদের সঙ্কেত নেই।

ইরানের অবস্থান (US Attack On Iran)
এই তিনটি কেন্দ্রে হামলার পরেও ইরান সরকার দাবি করছে, “কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়নি(US Attack On Iran)। জনগণের চিন্তার কোনও কারণ নেই।” কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তেহরান ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র গোপন করছে।নাতান্জ, ফোরডো ও ইসফাহান—ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মেরুদণ্ড। এই তিনটি ঘাঁটিতে আমেরিকার সফল বিমান হানায় শুধু পরিকাঠামো নয়, মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও বড় ধাক্কা খেয়েছে তেহরান। এখন দেখার, ইরান এই ক্ষতির মোকাবিলায় কী রণনীতি নেয় এবং ভবিষ্যতে তারা কীভাবে ‘প্রত্যাঘাত’-এর হুঁশিয়ারি রূপায়িত করে। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।