ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ আরও এক ধাপ তীব্র হয়ে উঠেছে (US China Tariff War)। পরস্পরের পণ্যের উপর চড়া হারে কর আরোপ করে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উত্তেজনা চরমে তুলেছে দুই দেশ। এই সংঘাত কেবল দ্বিপাক্ষিক নয়, এর প্রভাব পড়ছে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে।
১৪৫ বনাম ১২৫(US China Tariff War)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) গত ২ এপ্রিল চিনা পণ্যে ৬৭ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেন (US China Tariff War)। ১০ এপ্রিল সেই করের হার বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে নিয়ে যান তিনি। চিনও পালটা জবাব দিতে দেরি করেনি। ১১ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করবে বেজিং। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপে চিনা অর্থনীতি ধাক্কা খাবে বলে অনেকের ধারণা ছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বরং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের প্রস্তুতি আগেই সেরে ফেলেছে।
চিনের পাল্টা কৌশল (US China Tariff War)
চিনের রফতানি নির্ভরতা আমেরিকার উপর অনেকটাই কমে এসেছে (US China Tariff War)। ২০১৮ সালে যেখানে মোট রফতানির ২০ শতাংশ যেত আমেরিকায়, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে। ফলে শুল্কের প্রভাব কিছুটা হলেও হালকা করতে পারছে বেজিং। চিনা শিল্পপতিরা বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছেন ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার মাধ্যমে। ওই দুই দেশের মাধ্যমে ঘুরপথে পণ্য আমদানি করে করের বোঝা এড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে।এছাড়া ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতেও সক্রিয় চিনা কোম্পানিগুলি। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য কম দামে সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। নয়াদিল্লির সমর্থন আদায়ে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর কথাও বলছে বেজিং।

প্রযুক্তি ও খনিজ শক্তি: চিনের বড় হাতিয়ার (US China Tariff War)
চিনের দখলে রয়েছে বিরল খনিজের বিশাল ভাণ্ডার, যা আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। সোলার প্যানেল, সেমিকন্ডাক্টর, বৈদ্যুতিক গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—সব ক্ষেত্রেই চিন নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছে। হুয়াওয়ে ও ডিপসিক-এর মতো প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই মার্কিন টেক জায়ান্টদের প্রতিদ্বন্দ্বী।

বিশ্বজুড়ে প্রভাব (US China Tariff War)
শুল্কযুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে (US China Tariff War)। জেপি মর্গ্যান-এর মতে, এতে আমেরিকার ৮৬ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কাও বাড়ছে। চিনের ক্ষেত্রেও বেকারত্ব এবং শিল্প উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (US China Tariff War)
চিনে প্রেসিডেন্ট শি (Xi Jinping) অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকলেও, ট্রাম্পের মেয়াদ সীমিত (US China Tariff War)। এই পরিস্থিতিতে শি জিনপিং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলে এগোচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পাশে টানার কৌশলও নিচ্ছেন তিনি।শুল্কযুদ্ধ এখন আর শুধু শুল্কের লড়াই নয়, এটি দুই মহাশক্তিধরের আধিপত্যের লড়াই। বিশ্ব অর্থনীতি কীভাবে এই সংঘাত সামাল দেবে, তা সময়ই বলবে। আপাতত নিশ্চিত, এই যুদ্ধের আঁচে গরম হচ্ছে গোটা বিশ্ব।