ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি—চিন ও যুক্তরাষ্ট্র—বর্তমানে শুল্ক আরোপ ও পাল্টা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে এক অনিশ্চিত বাণিজ্য সংঘাতে লিপ্ত (US China Tariff War)। এই সংঘাত শুধু দু’দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর ঢেউ পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর দোরগোড়ায়ও। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও, চিনের পণ্যের ক্ষেত্রে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চিনও আমেরিকার পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এতে দু’দেশের মধ্যে কার্যত বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
বেশ কিছু দেশকে প্রস্তাব (US China Tariff War)
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald J. Trump) প্রশাসন বেশ কিছু দেশকে প্রস্তাব দিয়েছে—চিনের সঙ্গে বাণিজ্য হ্রাস করলে বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিলে তাদের উপর চাপানো শুল্ক হ্রাস করা হবে (US China Tariff War)। এই কৌশল একদিকে যেমন চিনকে বাণিজ্যিকভাবে একঘরে করতে পারে, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাবও বাড়াতে পারে। কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। বেজিংয়ের পক্ষ থেকে একটি কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে—যে কোনও দেশ যদি চিনের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনও চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, তবে চিন তা সহ্য করবে না এবং প্রয়োজন হলে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কঠোর অবস্থান চিনের (US China Tariff War)
চিনের বাণিজ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘কোনও এক জনের স্বার্থপরতাকে চরিতার্থ করার জন্য অন্যদের স্বার্থে আঘাত করলে আদতে দুই তরফেই ক্ষতি হবে(US China Tariff War)।’’ এর মাধ্যমে চিন পরিষ্কারভাবে বোঝাতে চেয়েছে যে, তারা এই বাণিজ্য লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়তে রাজি নয় এবং প্রয়োজনে কঠোর অবস্থান নেবে।বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব শুধু চিন-আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকেও এই দ্বন্দ্বের ফল ভোগ করতে হতে পারে। কারণ একদিকে আমেরিকা ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোর উপর শুল্ক বাড়িয়েছে, অন্যদিকে চিন হুঁশিয়ারি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান না নিতে। ফলে এসব দেশকে এক প্রকার কূটনৈতিক দোটানায় পড়তে হচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব (US China Tariff War)
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির জন্য এটি এক নেতিবাচক বার্তা (US China Tariff War)। বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, যা এমন সংঘাতের কারণে বারবার বিঘ্নিত হচ্ছে। চিন-আমেরিকার এই বিরোধ নিরসন না হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে, যা বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও ভয়াবহ হতে পারে।

আরও পড়ুন: US air strikes : আমেরিকার যুদ্ধবিমানের হামলায় কাঁপল ইয়েমেনের রাস ইশা বন্দর! নিহত ৩৮
অর্থনৈতিক ঠান্ডা যুদ্ধে (US China Tariff War)
সার্বিকভাবে বলা যায়, শুল্কের এই কূটনৈতিক লড়াই একটি নতুন ধরনের অর্থনৈতিক ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা করেছে(US China Tariff War)। দুই পরাশক্তির সংঘাতের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাকি দেশগুলোকে এখন অত্যন্ত কৌশলী ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে তারা নিজেদের স্বার্থও রক্ষা করতে পারে আবার বড় পরাশক্তির রোষানলে পড়তেও না হয়। সময়ই বলবে, এই সংঘাত কোন দিকে মোড় নেয়—সমঝোতার, না আরও বৃহৎ বাণিজ্য যুদ্ধের।