ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিন-আমেরিকা বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই গুরুতর রূপ নিচ্ছে। তার প্রভাব এ বার সরাসরি পড়ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িংয়ের উপর (US China Tariff War)। ব্লুমবার্গ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চিনা বিমান সংস্থাগুলিকে বোয়িংয়ের কাছ থেকে নতুন বিমান না কেনার নির্দেশ দিয়েছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের (Xi Jinping) সরকার। সেই সঙ্গে বোয়িং নির্মিত বিমানের যন্ত্রাংশ আমদানি নিয়েও একাধিক বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
বাণিজ্য সম্পর্ক তলানিতে (US China Tariff War)
চিন-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক আগেই তলানিতে ঠেকেছিল (US China Tariff War)। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে ফিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) চিনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চাপান। এর পাল্টা জবাবে আমেরিকান পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে বেজিং। দুই পক্ষের এই পাল্টা-পাল্টি পদক্ষেপের মধ্যেই বোয়িংকে ঘিরে চিনের নতুন কৌশল মারাত্মকভাবে দগদগে হয়ে উঠেছে।
বোয়িংয়ের ব্যবসায় ধসের আশঙ্কা (US China Tariff War)
চিনের এই পদক্ষেপের ফলে বোয়িংয়ের বহির্বিশ্বে ব্যবসায় বড়সড় ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা (US China Tariff War)। বিশেষ করে যখন জানা যাচ্ছে, চিনের তিনটি শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা— এয়ার চায়না, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স এবং চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্স— আগামী দু’বছরে যথাক্রমে ৪৫, ৫৩ এবং ৮১টি বোয়িং বিমান কেনার পরিকল্পনা করেছিল। শি জিনপিংয়ের নিষেধাজ্ঞার ফলে এই পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে গেল।

কূটনৈতিক ধাক্কা (US China Tariff War)
বোয়িংয়ের জন্য বিষয়টি শুধু বাণিজ্যিক ক্ষতির নয়, এটি একটি কূটনৈতিক ধাক্কাও বটে (US China Tariff War)। কারণ, চিন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান বাজার। ২০২৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের বিমান পরিবহণ শিল্পে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি হবে চিনে— এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সমিতি (IATA)। সেই বাজার হারানোর অর্থ, বোয়িংকে বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে— যা সহজ নয়।

আরও পড়ুন: US China Tariff War : চিনা পোশাক পরায় বিতর্কে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট
লাভবান হতে পারে এয়ারবাস (US China Tariff War)
এই পরিস্থিতিতে লাভবান হতে পারে ইউরোপের এয়ারবাস এবং চিনা সংস্থা ‘কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশন অফ চায়না’ (COMAC)। ইতিমধ্যে এয়ারবাস চিনে তাদের প্রোডাকশন ইউনিট প্রসারিত করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, কোম্যাক ধীরে ধীরে নিজের আধিপত্য গড়ে তুলছে চিনা বাজারে, বিশেষ করে C919 মডেলটি দেশীয় বাজারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আরও পড়ুন: Balochistan Blast : বালোচিস্তানে ফের রক্তাক্ত হামলা! বোমা বিস্ফোরণে মৃত ৩ পুলিশকর্মী, আহত অন্তত ১৬
বিকল্প পথ খোলা (US China Tariff War)
তবে একমাত্র রেহাই হিসেবে থেকে যাচ্ছে একটি ছোটো পথ— বোয়িং নির্মিত বিমান সরাসরি না কিনলেও, চিনা সংস্থাগুলিকে মার্কিন বা ইউরোপীয় এয়ারলাইন থেকে বোয়িং বিমান ভাড়া নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক উড়ানে বোয়িংয়ের দক্ষতা এবং রেঞ্জের কথা মাথায় রেখেই এই বিকল্প পথ খোলা রাখা হয়েছে।
বোয়িং ক্ষতিগ্রস্ত হবে (US China Tariff War)
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বোয়িংয়ের কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে এটি আরও প্রমাণ করে দিচ্ছে, দুই পরাশক্তির শুল্কযুদ্ধ আর শুধু পণ্য আদানপ্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি কৌশলগত ও প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে রূপ নিচ্ছে।বর্তমানে, সবকিছু নির্ভর করছে দুই দেশের মধ্যে আগামী আলোচনার উপর। আপস না হলে বোয়িং-চিন সম্পর্কের এই ফাটল আরও গভীর হবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।