ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিগত কয়েক বছর ধরেই আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন লেগেই রয়েছে (US-China Tariff War)। তবে সম্প্রতি শুল্ক সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্তগুলির ফলে এই সংঘাত আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) নেতৃত্বাধীন প্রশাসন চিনা পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি করে তা ১৪৫ শতাংশে নিয়ে গেছে, যা চিনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বাণিজ্যিক অবস্থানেরই প্রতিফলন। অন্যদিকে, চিনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে দেরি করেনি। তারা আমদানি করা মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ঘোষণা করেছে।
চিনের প্রতি কঠোর ট্রাম্প (US-China Tariff War)
এই শুল্কবৃদ্ধির ঘোষণাগুলি আসে এমন এক সময়, যখন ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরেছেন এবং চিনের প্রতি তার প্রশাসনের কঠোর মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে (US-China Tariff War)। চলতি বছরের শুরুতেই আমেরিকা চিনা পণ্যের উপর প্রথমে ২০ শতাংশ এবং পরবর্তীতে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর পরপরই চিন পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, যার ফলে ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে একাধিক ধাপে শুল্কের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০৪ শতাংশে। এরপর তা আরও বাড়িয়ে প্রথমে ১২৫ শতাংশ এবং সবশেষে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়।
শুল্ক বৃদ্ধির ব্যাখ্যা (US-China Tariff War)
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এই শুল্ক বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানান, মূলত চিন (Xi Jinping) থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক নতুনভাবে আরোপ করা হয়েছে (US-China Tariff War)। তবে চিনের বিরুদ্ধে ফেন্টানাইল নামক নিষিদ্ধ ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগে আগে থেকেই ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ছিল। এই দুই স্তরের শুল্ক মিলে এখন চিনা পণ্যে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশ।
আরো পড়ুন: Putin’s Shadow Fleets : নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে জ্বালানি রফতানির গোপন কৌশল দেখাচ্ছে রাশিয়ার ‘ছায়া নৌবহর
চিনের জবাব (US-China Tariff War)
চিনের পক্ষ থেকেও কঠিন বার্তা এসেছে (US-China Tariff War)। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমেরিকা যদি চিনের স্বার্থে বারবার আঘাত হানে, তবে চিনও তার জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পষ্ট ভাষায় বলেন, আমেরিকার একতরফা বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একজোট হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তার আহ্বান ছিল, যেন তারা একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
আরো পড়ুন: Pakistan Dependency on China : সমরাস্ত্রে ড্রাগেনের উপর ভরসা কাল হবে পাকিস্তানের?
শুল্ক সমঝোতার চেষ্টা (US-China Tariff War)
তবে আশার কথা এই যে, আমেরিকা অন্যান্য দেশের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করছে (US-China Tariff War)। ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর আলাদা আলাদা হারে শুল্ক আরোপের কথা জানান, কিন্তু ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত রাখার কথাও বলেন। যদিও এই স্থগিতাদেশ থেকে চিনকে বাদ রাখা হয়েছে।
শুল্কযুদ্ধের প্রভাব (US-China Tariff War)
এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট, আমেরিকা ও চিনের মধ্যকার এই শুল্কযুদ্ধ শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং বহু দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থাও এই সংঘাতের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যিক দিক থেকে এই সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তার পরিণতি সমগ্র বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যই উদ্বেগজনক হতে পারে।