ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পশ্চিম এশিয়া সফরের আবহেই ইরান থেকে এল একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তাব্যর্থ আলোচনার পর ইঙ্গিতবাহী নমনীয়তা (US Iran Nuclear Talks)। মঙ্গলবার তেহরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সাময়িক ভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কর্মসূচিতে রাশ টানতে প্রস্তুত। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাজিদ তাখত-রাভানচি দেশটির সংবাদ সংস্থা তাসনিমকে জানিয়েছেন, “একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, আমরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের স্তর ও পরিমাণে কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে পারি।”
এই ঘোষণা এমন সময় এল, যখন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন চরমে। যদিও তাখত-রাভানচি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আপাতত এই বিষয়ে আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে তেহরানের কোনও সরাসরি আলোচনা হয়নিব্যর্থ আলোচনার পর ইঙ্গিতবাহী নমনীয়তা (US Iran Nuclear Talks)। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের মতে, ইরান সরকারের এই মনোভাব কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দিচ্ছে ভবিষ্যতে আলোচনার দ্বার খোলার সম্ভাবনার।
ব্যর্থ আলোচনার পর ইঙ্গিতবাহী নমনীয়তা (US Iran Nuclear Talks)
গত ২৮ এপ্রিল ওমানের রাজধানী মাস্কটে পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত তৃতীয় দফার বৈঠকে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি (Seyed Abbas Araghchi) এবং মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ-সহ দুই পক্ষের কূটনৈতিক ও পরমাণু বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের কঠোর শর্তের মুখে তেহরান কোনওরকম চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে নারাজ হওয়ায় ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। ইটালিতে চতুর্থ দফার আলোচনাও অনড় মনোভাবের কারণে বাতিল হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও সামরিক চাপ (US Iran Nuclear Talks)
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (IAEA)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ইরান চুক্তিভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে (US Iran Nuclear Talks)। তাঁর আশঙ্কা, তেহরান হয়তো পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকেই এগোচ্ছে। যদিও পরমাণু বোমার জন্য প্রয়োজন ৯০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম, সেখানে ইরান বর্তমানে উৎপাদন করছে ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম, যার পরিমাণ প্রায় ৪২ কিলোগ্রাম। তা দিয়েও কম শক্তির একটি পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও, পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ইরান অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে এমন পরমাণু সেন্ট্রিফিউজ তৈরিতেও অগ্রগতি করেছে। যদিও ইরান আগেই জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যই এই কর্মসূচি চালাচ্ছে(US Iran Nuclear Talks)।

আরও পড়ুন: Security Of S Jaishankar : বাড়ানো হল বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের নিরাপত্তা! কেন এই সিদ্ধান্ত ?
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এবং চাপ (US Iran Nuclear Talks)
মার্চ মাসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (Donald J. Trump) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে একটি চিঠি দিয়ে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন পরমাণু চুক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য(US Iran Nuclear Talks)। ট্রাম্প সরকারের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বার্তার মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ, এমনকি পরমাণু হামলার হুমকিও উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের তরফে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সাময়িক রাশ টানার বার্তা অনেকের কাছে একটি কৌশলগত পিছু হট হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।ট্রাম্পের সফরের সময় এমন একটি ঘোষণা ইরান কূটনৈতিকভাবে সচেতনভাবে করেছে বলেই বিশ্লেষকদের অনুমান(US Iran Nuclear Talks)। আপাতত, তেহরান আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ করছে না—এমন ইঙ্গিত থাকলেও, চুক্তির প্রশ্নে পশ্চিম ও তেহরানের দূরত্ব এখনও বিস্তর। তবুও এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আলোচনার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।