ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্ক (US Iran Nuclear Talks)। এই পরিস্থিতিতে ইরান সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু নজরদারি সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি’ (আইএইএ)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। লক্ষ্য, উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি (US Iran Nuclear Talks)
অন্য দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald J. Trump) হুঁশিয়ারির জবাবে বুধবার ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে—তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে কোনও অবস্থাতেই তারা সরে আসবে না (US Iran Nuclear Talks)। এই বিবৃতির ফলে আন্তর্জাতিক মহলে আরও একবার উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে।গ্রোসি নিজে অবশ্য শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইরানের সঙ্গে আমাদের আরও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। আমি আশাবাদী যে শেষ পর্যন্ত আমরা একটি সমাধানে পৌঁছতে পারব।” তবে তাঁরই সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান এখন পরমাণু বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে—এমন আশঙ্কা থেকেই বাড়ছে চাপ।
ইরান-মার্কিন দ্বিতীয় বৈঠক (US Iran Nuclear Talks)
এই আবহে শনিবার থেকে ওমানের রাজধানী মাসকটে শুরু হতে চলেছে ইরান-মার্কিন দ্বিতীয় দফার মুখোমুখি বৈঠক (US Iran Nuclear Talks)। প্রথম রাউন্ডের আলোচনা চলতি মাসের শুরুতে হয় এবং তা অত্যন্ত সীমিত অগ্রগতি নিয়ে শেষ হয়েছিল।এদিকে, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “চুক্তি করতে চাইলে ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও অন্যান্য পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।” জবাবে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরকচি জানিয়ে দেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার—এ নিয়ে কোনও আলোচনা চলবে না।”

আরও পড়ুন: Russia Ukraine War : ধৃত রুশপক্ষের চিনা সেনাদের পরিচয় প্রকাশ করলো ইউক্রেন! প্রতিবাদে সরব বেজিং
পরমাণু চুক্তি (US Iran Nuclear Talks)
২০১৫ সালে ওবামা সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) চুক্তির ফলে ইরান পরমাণু কর্মসূচি সীমিত রাখলে তার উপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল (US Iran Nuclear Talks)। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন সেই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে এবং ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপায়। ২০২৪ সালে আইএইএ রিপোর্ট প্রকাশের পর জানা যায়, ইরান ফের ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করছে, যা পরমাণু বোমা তৈরির মাত্র একটি ধাপ আগেই অবস্থান করছে। এতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ে।

ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (US Iran Nuclear Talks)
ইরানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি একান্তই শান্তিপূর্ণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চিকিৎসা গবেষণার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় (US Iran Nuclear Talks)। তবে পশ্চিমা দেশগুলি এই যুক্তিকে মানতে নারাজ। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘে খোলা চিঠি দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, প্রয়োজন হলে ইরানের বিরুদ্ধে পুরনো নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা হবে।

দুই মাসের সময়সীমা (US Iran Nuclear Talks)
মার্চে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে একটি চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার জন্য দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন এবং সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দেন (US Iran Nuclear Talks)। এই চাপের মুখে ইরান প্রথমে আলোচনায় রাজি না হলেও পরে ওমানে প্রথম বৈঠকে বসতে সম্মত হয়।আপাতত নজর রয়েছে গ্রোসির ইরান সফরে ও ওমানে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে। আন্তর্জাতিক মহল চাইছে—সংঘর্ষ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। তবে ইরানের জেদ ও মার্কিন হুঁশিয়ারি দুই-ই মিলিয়ে পরিস্থিতি কতটা শান্তিপূর্ণভাবে মেটানো যাবে, তা সময়ই বলবে।