ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারত মহাসাগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চাগোস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা অবশেষে ফিরে পেল মরিশাস (US Military AirBase)। তবে এর অন্যতম ও সবচেয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ সামরিক ঘাঁটি অন্তত আরও ৯৯ বছর বহাল থাকবে। এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
মালিকানা বিতর্কিত (US Military AirBase)
দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্কিত ছিল এই প্রবাল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা(US Military AirBase)। ঔপনিবেশিক শাসনকালে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ ছিল মরিশাসের অংশ, যা পরবর্তীকালে ব্রিটিশ উপনিবেশে রূপ নেয়। ১৯৬৮ সালে মরিশাস স্বাধীনতা পেলেও, চাগোস দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটেনের অধীনে থেকে যায়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের (Donald J. Trump) সঙ্গে করা এক চুক্তিতে দিয়েগো গার্সিয়ার বিশাল এলাকা মার্কিন ঘাঁটি নির্মাণে ব্যবহৃত হতে থাকে। ওই সময় থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধে।
ব্রিটেন ও মরিশাসের হস্তান্তর চুক্তি (US Military AirBase)
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে ব্রিটেন ও মরিশাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় একটি হস্তান্তর চুক্তি, যার মাধ্যমে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয় মরিশাসকে। তবে শর্ত অনুযায়ী, দিয়েগো গার্সিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি ৯৯ বছরের জন্য লিজে রেখে দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তিকে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কারণ এই ঘাঁটি তাদের অন্যতম কৌশলগত সামরিক ‘লজিস্টিক হাব’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

দিয়েগো গার্সিয়ার গুরুত্ব(US Military AirBase)
ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপটি আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি কৌশলগত কেন্দ্রস্থল(US Military AirBase)। এখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালিয়েছে। উপসাগরীয় যুদ্ধ, আফগানিস্তান ও ইরাক অভিযান—সব ক্ষেত্রেই দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র ছিল।বর্তমানে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন এখানে বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত এবং কার্যকর আক্রমণ পরিচালনা করা সম্ভব। পাশাপাশি, এই ঘাঁটি থেকে চালানো হয় নিয়মিত নজরদারি ড্রোন, গোয়েন্দা বিমান এবং উপগ্রহ সংযোগ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া (US Military AirBase)
এই চুক্তি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া(US Military AirBase)। চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিতাড়িত স্থানীয় চাগোসিয়ানরা দীর্ঘদিন ধরে নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করে আসছেন। তারা এই হস্তান্তর চুক্তিতে নিজেদের মতামতের জায়গা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, মরিশাসের হাতে সার্বভৌমত্ব ফিরলেও মার্কিন সামরিক উপস্থিতি এই দ্বীপপুঞ্জকে একটি অস্থায়ী সংঘাত-প্রবণ অঞ্চলে পরিণত করতে পারে।অন্যদিকে, ভারত এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই চুক্তি উপনিবেশিক অধ্যায়ের অবসান এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি সময়োচিত পদক্ষেপ।”

আরও পড়ুন: Sheikh Hasina : নব্য আওয়ামী লীগ গঠনের চক্রান্ত! রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় বাংলাদেশে?
চিনের আগ্রাসী কৌশল (US Military AirBase)
এই পুরো ঘটনার পেছনে ভূরাজনৈতিক একটি বড় মাত্রা হচ্ছে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী কৌশল(US Military AirBase)। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেইজিংয়ের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। পাকিস্তানের গদর বন্দরে, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় চীনের বন্দর নির্মাণ, এমনকি আফ্রিকার পূর্ব উপকূলেও তার প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র চায়, দিয়েগো গার্সিয়াকে ঘাঁটি হিসেবে রেখে দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান ইস্যুতেও চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।
ঐতিহাসিক পদক্ষেপ(US Military AirBase)
চাগোস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা হস্তান্তর বিশ্ব রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি একদিকে যেমন ঔপনিবেশিক যুগের অবসানের প্রতীক, তেমনি অন্যদিকে কৌশলগত সামরিক ভারসাম্যের নতুন সমীকরণ। মরিশাস সার্বভৌমত্ব ফিরে পেলেও দিয়েগো গার্সিয়া এখনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে। এই ঘাঁটি নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো জটিলতা তৈরি হয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।