ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়া ও আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও টানাপড়েনের পথে হাঁটলেও হঠাৎই এক আশ্চর্য বৈঠক—মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকে বসলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ (US Russia Relations)। ‘শান্তির ইঙ্গিত’ না কি ভবিষ্যতের বৃহত্তর কূটনৈতিক কৌশলের অংশ—এই বৈঠক ঘিরে এখন জল্পনা তুঙ্গে।
বুধবার তিন ঘণ্টার সেই বৈঠক শেষেও দুই পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে বিশেষ কিছু বলা হয়নি। তবে রুশ সরকারি সংবাদ সংস্থা TASS জানিয়েছে, আলোচনা ছিল “ইতিবাচক”। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকোভ, যিনি সাধারণত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনায় যুক্ত হন।
আমেরিকা ও রাশিয়ার সম্পর্কে চরম উত্তেজনা (US Russia Relations)
এই বৈঠক এমন এক সময়ে ঘটল, যখন আমেরিকা ও রাশিয়ার সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে(US Russia Relations)। ৩১ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারত ও রাশিয়ার অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন— “আমি চিন্তিত নই ভারত-রাশিয়া কী করছে। তারা চাইলে একসঙ্গে তাদের মৃত অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দিতে পারে।”
ট্রাম্পের (Donald J. Trump) এই বিতর্কিত মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় রাশিয়া। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন—”যাদের ‘মৃত’ বলা হচ্ছে, তাদের ‘ডেড হ্যান্ড’-এর ভয়াবহতা এড়িয়ে যাওয়া সহজ হবে না।”
এই বক্তব্যে নতুন করে সামনে চলে আসে রাশিয়ার এক ভয়াবহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—‘ডেড হ্যান্ড’(US Russia Relations)। এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয় পরমাণু প্রত্যাঘাত ব্যবস্থা যা শত্রু দেশের প্রথম পরমাণু আঘাতের পরও পাল্টা আক্রমণ করতে সক্ষম। সহজ কথায়, যদি রুশ নেতৃত্ব ও সেনা কমান্ড ধ্বংস হয়ে যায়, তবুও ‘ডেড হ্যান্ড’ সক্রিয় হয়ে পশ্চিমি শক্তির উপর শেষ প্রতিশোধ নিতে পারবে।
রাশিয়ার জলসীমায় পরমাণু অস্ত্রবাহী মার্কিন সাবমেরিন (US Russia Relations)
ট্রাম্প, যিনি ২০২4 সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য প্রার্থী, এই মন্তব্যকে “প্ররোচনামূলক” বলে ব্যাখ্যা করেছেন(US Russia Relations)। তার জবাব হিসেবে আমেরিকা দুটি পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিন পাঠিয়েছে রাশিয়ার জলসীমার কাছাকাছি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৮০’র দশকের পর এটিই প্রথম এমন ঘটনা, যা শীতল যুদ্ধের ছায়াকে ফিরিয়ে এনেছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই স্টিভ উইটকফের মস্কো সফর এবং পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক কূটনৈতিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, উইটকফ মূলত ট্রাম্পের কূটনৈতিক দূত হিসেবে মস্কো গিয়েছেন, এবং ইউক্রেন যুদ্ধ, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ঘিরে ভারত-মস্কো-ওয়াশিংটনের ত্রিপাক্ষিক উত্তেজনা এবং আসন্ন মার্কিন নির্বাচন—এই তিনটি বিষয়ই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল(US Russia Relations)।

ভারতীয় প্রেক্ষাপটেও প্রাসঙ্গিক (US Russia Relations)
এই বৈঠক ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আমেরিকার উদ্বেগ স্পষ্ট হয়েছে(US Russia Relations)। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ দাবি করেছে, ভারতের হাতে থাকা ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রে পরমাণু ওয়ারহেড যুক্ত করা হয়েছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার সম্ভাব্য ব্যবহারের পরিকল্পনাও হয়েছে। মস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘিরে আমেরিকার টানাপড়েন বাড়ছে।
রাশিয়া এই মুহূর্তে ব্রহ্মস-এর হাইপারসনিক সংস্করণ (ব্রহ্মস-২) নিয়ে এগোচ্ছে। নতুন সংস্করণে ভারতের আওতায় আসবে গোটা পাকিস্তান এবং চিনের অধিকাংশ অংশ। ফলে আমেরিকা এই কৌশলগত সমীকরণে অস্বস্তিতে পড়েছে।

আরও পড়ুন: Bangladesh Election : ফ্রেব্রুয়ারি তে সাধারণ নির্বাচন বাংলাদেশে! নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিল ইউনূস
পেছনে কূটনৈতিক তাস? (US Russia Relations)
উইটকফ-পুতিন বৈঠক হয়তো এই অস্বস্তি দূর করার প্রচেষ্টা(US Russia Relations)। আবার হয়তো ভবিষ্যতের ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নীতির আভাস দিতেও মস্কো সফর করেছেন তিনি। এমনও হতে পারে, ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সঙ্গে সমঝোতার রূপরেখা তৈরি করতে চাইছেন, যা তাঁকে নির্বাচনী সুবিধাও দিতে পারে।
যদিও এই বৈঠকের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও ফলাফল এখনও অজ্ঞাত, তবু স্পষ্ট—রাশিয়া-আমেরিকা উত্তেজনার মধ্যেও গোপন আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আর সেই দরজা দিয়েই আবারও প্রবেশ করল এক অনিশ্চিত, শীতল অথচ জটিল কূটনৈতিক পর্ব। তৎক্ষণাৎ কোনও সমঝোতা না হলেও, এই বৈঠক ভবিষ্যতের পথচিত্র নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। পূর্বাভাস—বৈঠকের প্রভাব নির্বাচনের ফলাফলেও প্রতিফলিত হতে পারে(US Russia Relations)।