ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল:মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতি বিশ্বজুড়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে(US Tariff War)। ৬০টিরও বেশি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ বা তারও বেশি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। ভারতের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশকেও ছাড় দেননি—ভারতের উপর আরোপিত শুল্কের হার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক পর্যায়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও ট্রাম্প তা গায়ে মাখতে নারাজ।
শুল্কযুদ্ধের যুক্তি (US Tariff War)
ট্রাম্পের (Donald J. Trump) দাবি, তাঁর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক এবং আমেরিকার অর্থনীতির জন্য লাভজনক(US Tariff War)। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি লেখেন, “শুল্কবৃদ্ধি শেয়ার বাজারে রেকর্ড ভাঙা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে বাজার।”
ট্রাম্পের মতে, শুল্ক আরোপের ফলে শত শত কোটি ডলার সরকারি কোষাগারে ঢুকছে, যা দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাঁর বিশ্বাস, শুল্কনীতি আমেরিকার “সম্পদ, শক্তি এবং ক্ষমতা” রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা (US Tariff War)
শুল্কবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা কম নয়(US Tariff War)। বিশেষত ভারত ও ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো ৫০ শতাংশ শুল্কের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। অতীতে একাধিকবার ভারতকে ‘বন্ধু’ আখ্যা দেওয়ার পরও এত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করায় ট্রাম্পের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শুল্ক বিষয়ে আলোচনা না করলে ভারতের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যচুক্তির প্রশ্নই উঠবে না। এই হুঁশিয়ারি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: SSC Recruitment : নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মেনেই এসএসসি-এর নিয়োগ,সমস্ত পরীক্ষার্থীকে বয়সের ছাড় নয়
আদালতের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ (US Tariff War)
ট্রাম্প আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে মার্কিন আদালত যদি তাঁর শুল্ক নীতির উপর স্থগিতাদেশ দেয়, তবে তা হবে “অত্যন্ত হতাশাজনক” এবং ১৯২৯ সালের মহামন্দার মতো পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে(US Tariff War)। তাঁর ভাষায়,“যদি একটি উগ্র বাম আদালত এই ব্যবস্থা বাতিল করে, তবে সেটি আবারও ১৯২৯ সালের মতো হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯২৯ সালে বিশ্বব্যাপী মহামন্দার সূচনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ার বাজার ধসে পড়ার মাধ্যমে। এক দশকব্যাপী সেই মন্দা শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করেছিল।

আরও পড়ুন: New Income Tax Bill : নতুন আয়কর বিল প্রত্যাহার করে সংশোধিত সংস্করণ পেশের পথে কেন্দ্র!
অর্থনৈতিক সাফল্যের দাবি বনাম রাজনৈতিক বাস্তবতা (US Tariff War)
ট্রাম্প দাবি করেন, বিরোধীরা শুল্কনীতি নিয়ে শুরুতেই আইনি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারত, কিন্তু যখন অর্থনৈতিক লাভ দৃশ্যমান হচ্ছে, তখন এটি বাতিলের চেষ্টা করা “ভুল” হবে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকার ইতিহাসে তাঁর মতো কোনও প্রেসিডেন্টকে এত পরীক্ষা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। শুল্কযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে করেন।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধিতে স্বল্পমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। উচ্চ শুল্ক আমদানির খরচ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত মার্কিন ভোক্তাদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ আনতে পারে।