ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) নতুন শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে (US Tariff War)। ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এই নীতির আওতায় বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর ১০ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের নানা দেশ এখন আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষিতে নেমেছে।
কথা বলছে ৫০টি দেশ (US Tariff War)
হোয়াইট হাউসের (US Tariff War) অর্থনৈতিক কাউন্সিলের অধিকর্তা কেভিন হ্যাসেট জানিয়েছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এই শুল্ক ইস্যুতে। তার দাবি, এই দেশগুলি বুঝে ফেলেছে যে তারা অতিরিক্ত কর নিচ্ছে এবং সেই কারণেই তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। যদিও তিনি স্পষ্ট করে বলেননি কোন কোন দেশ এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।
ভারতের উদ্বেগ ও প্রস্তুতি (US Tariff War)
ট্রাম্প প্রশাসনের (US Tariff War) ঘোষণার ফলে ভারতের পণ্যের উপর সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। চিংড়ি, কার্পেট, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সোনার গহনার মতো রফতানি নির্ভর পণ্যে এই শুল্ক আরোপ ভারতের রফতানিকারকদের কাঁধে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের মোট রফতানির ১৮ শতাংশ যায় মার্কিন বাজারে, তাই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: US Tariff War : মার্কিন শুল্ক নীতিতে বেসামাল এশিয়ার শেয়ার বাজার! ‘ওষুধ কাজে দিয়েছে’ বলছেন ট্রাম্প
পীযূষ গোয়েলের বৈঠকে (US Tariff War)
এই প্রেক্ষিতে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আগামী বুধবার দেশের রফতানি সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন (US Tariff War)। এই বৈঠকে শুল্ক বৃদ্ধির ক্ষতি কীভাবে সামলানো যাবে এবং রফতানিকারকদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ইতিমধ্যেই রফতানি সংস্থাগুলি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থনৈতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: Pakistan Nuclear Weapons : কেন পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছিল ভারত-ইজ়রায়েল?
বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগ (US Tariff War)
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও সক্রিয় হয়েছে এই শুল্ক সংকট মোকাবিলায় । সে দেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপানোর প্রতিক্রিয়ায় দু’টি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি চিঠি সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে, এবং অন্যটি পাঠানো হবে মার্কিন বাণিজ্য দফতরে।
ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানের কৌশল (US Tariff War)
ব্লুমবার্গ ও রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ান আমেরিকান পণ্যের উপর থেকে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা করছে। তাদের লক্ষ্য, আমেরিকান সংস্থাগুলিকে নিজেদের দেশে আরও বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা।
মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা আমেরিকাতেও (US Tariff War)
বিশ্লেষকদের মতে, একতরফা শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকার বাজারেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও কেভিন হ্যাসেট এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “এই শুল্কের ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না, বরং দেশগুলিকে সঠিক পথে আনার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।” ট্রাম্প প্রশাসনের এই কড়াকড়ি শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন দেখার, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা কোনও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে কি না। নতুবা এই শুল্ক যুদ্ধ এক ভয়াবহ বিশ্ব মন্দার দিকে ধাবিত করতে পারে গোটা পৃথিবীকে।