ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিরাট প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে ১৭ বছর পর বিরাট কোহলির (Virat Kohli) হাতে উঠল আইপিএল ট্রফি। মঙ্গলবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস আইপিএল ফাইনালে পঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেও ট্রফি জেতা হল না পঞ্জাবের। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি জিততে পারেনি আরসিবি। চতুর্থ বারে সেই আক্ষেপ ঘুঁচলো বেঙ্গালুরুর।
অপরদিকে, দ্বিতীয়বার আইপিএল ফাইনালে উঠেও এবারও কাপ জেতা হল না পঞ্জাবের। প্রথমে ব্যাট করে আরসিবি কুড়ি ওভারে ৯ উইকেটে তুলেছিল ১৯০ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৪ রানেই থেমে গেল পঞ্জাবের ইনিংস। অধিনায়ক হিসাবে দু’টি দলকে চ্যাম্পিয়ন করার রেকর্ড গড়া হল না শ্রেয়স আইয়ারের। গতবার তার অধিনায়ক করতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। এ’বছর রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল পাঞ্জাব অধিনায়ককে।

১৮ বছরের ‘অধরা’ স্বপ্ন পূরণ (Virat Kohli)
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত এগারোটা বেজে ২৫ মিনিট। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটা লেখা- ‘দ্য ওয়েট ইজ ওভার’। সত্যিই প্রতীক্ষার অবসান। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এই সময়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার তিনি। ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি- বিশ্ব ক্রিকেটের প্রায় সমস্ত বড় টুর্নামেন্টের খেতাব জেতা হয়ে গিয়েছে তাঁর। গোটা বিশ্ব তাঁকে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটারের সার্টিফিকেটও দিয়ে দিয়েছে। অথচ বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় বেসরকারি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএল-এর খেতাব অধরাই রয়ে গিয়েছিল তাঁর (Virat Kohli)। দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হল। অবশেষে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) হাতে উঠল আইপিএল ট্রফি। তাই, ৩রা জুন, ২০২৫ তারিখ রাত থেকে বলা যেতেই পারে, বিরাট কোহলি ক্রিকেট কেরিয়ার আসলে ‘সব পেয়েছির আসর’।

সত্যিই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। কথায় আছে ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। বিরাটের (Virat Kohli) ক্ষেত্রে কথাটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ১৭টা বছর আরসিবি’র জার্সিতে এই দিনটার অপেক্ষাই করেছিলেন বিরাট। অপেক্ষা ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হতেই ক্রিকেট ঈশ্বর সদয় হলেন। তাঁর প্রায় প্রত্যেকটা স্বপ্নই অতি যত্নে পূরণ করলেন ক্রিকেট ঈশ্বর। তাই ম্যাচের শেষ ওভারের চার বল বাকি থাকতে মাঠের মাঝেই বিরাটের অশ্রুসিক্ত চোখ ভেসে উঠল টিভির পর্দায়। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আনন্দাশ্রু লুকানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু সে চেষ্টা বৃথাই গিয়েছে। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব দেখল, প্রতিদিন সাফল্যের খিদে নিয়ে ঘুমোতে যাওয়া বিরাটের স্বপ্ন সকলের আনন্দধারা। এখানেই বাকিদের সঙ্গে পার্থক্য কিংবদন্তিদের। বিরাট সত্যিই কিংবদন্তি (Virat Kohli)।
মঙ্গলবার ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে আহমেদাবাদের পিচ দেখে ম্যাথু হেডেন বলেছিলেন, কমকরে ২২০ রান ওঠার মতো উইকেট। কিন্তু টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আরসিবি’র ব্যাটিং দেখে তেমনটা মনে হয়নি। শুরু থেকেই বলের গতি হেরফের করে এবং শর্ট বল করে আরসিবি’র ব্যাটারদের আটকে রাখার পরিকল্পনা নিয়েই বল করে গিয়েছেন পঞ্জাবের আর্শদীপ সিং, কাইল জেমিসনরা। আর সেই ফাঁদেই পড়ে গিয়েছিলেন আরসিবি’র ব্যাটসম্যানরা (Virat Kohli) । দলের হয়ে ৩৫ বলে মাত্র ৩ বাউন্ডারির সাহায্যে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করলেন বিরাটই। যা মোটেও কোহলিসুলভ ব্যাটিং নয়। তাঁর পর অধিনায়ক রজত পতিদার করলেন ২৬ রান।

আরসিবি’র কোনও ব্যাটসম্যানই বড় রান করতে পারেননি। ফিল সল্ট ১৬, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ২৪, লিভিংস্টোন ২৫, জিতেশ শর্মা ২৪, রোমারিও শেফার্ড ১৭ রান করলেন। তবুও ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯০ রানে পৌঁছে যায় আরসিবি। যখনই আরসিবি বড় পার্টনারশিপ করতে গিয়েছে, তখনই পঞ্জাব বোলাররা উইকেট তুলে নিয়ে তা থামিয়ে দিয়েছে (Virat Kohli) । পঞ্জাবের হয়ে আর্শদীপ ও জেমিসন ৩টি করে এবং চাহাল, ওমারজাই ও বিজয়কুমার বিশাখ একটি করে উইকেট নিলেন।
অধিনায়ক হিসেবে দু’দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হল না শ্রেয়স আইয়ারের
জবাবে ব্যাট করতে নেমে পঞ্জাবের দুই ওপেনার প্রিয়ান্স আর্য এবং প্রভসিমরন সিং শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু হ্যাজেলউডের বলে ডিপে ২৪ রানে ব্যাট করা প্রিয়ান্সের অনবদ্য ক্যাচ ধরেন ফিল সল্ট। এরপর প্রভসিমরনকেও (২৬) দ্রুত ফিরিয়ে দেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। পরের ওভারেই শেফার্ড গত মুম্বই ম্যাচে দুরন্ত ব্যাট করা পঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারকে (১) ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো চাপে ফেলে দেন।

এরপর জশ ইংলিশ দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। ভালোই ব্যাট করে দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তখনই তাঁকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান ক্রুনাল। ২৩ বলে এক বাউন্ডারি ও চার ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৯ রান করে দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে লিভিংস্টোনের হাতে জমা পড়েন ইংলিশ। ম্যাচের রাস তখনই পঞ্জাবের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ইংলিশ যদি আরেকটু ধৈর্য ধরতেন তাহলে বিরাটের অপেক্ষা আরও বাড়িয়ে ট্রফিটা আবারও হাতে তুলে নিতে পারতেন শ্রেয়স।
১৭তম ওভারে গত মুম্বই ম্যাচে শ্রেয়সকে যোগ্য সঙ্গত দেওয়া নেওয়াল ওয়াধেরা (১৭) এবং মার্কাস স্টইনিসকে (৬) ফিরিয়ে দিয়ে আরসিবি-কে ট্রফি (Virat Kohli) জয়ের আরও কাছে পৌঁছে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। কিন্তু পঞ্জাবের শেষ আশাটুকু শেষ ওভার পর্যন্ত একা হাতে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন শশাঙ্ক সিং। তাঁর একার ব্যাটে ভর করেই শেষ মুহূর্তে উত্তেজনার রং লেগেছিল ম্যাচে। শেষ ওভারে পঞ্জাবের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৯ রান। হ্যাজেলউডের সেই ওভারে তিনটি ওভার বাউন্ডারি ও একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২২ রান তুলে দলকে ১৮৪ তে পৌঁছে দিয়েছিলেন শশাঙ্ক। তবুও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।

জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরেই থেমে যায় পঞ্জাবের ইনিংস। শেষ ওভারের প্রথম দু’টি বলে কোনও রান করতে পারেননি শশাঙ্ক। আর সেটাই পঞ্জাবের জয়ের পথে কাল হয়ে দাঁড়াল। শেষে ৩০ বলে ৩ বাউন্ডারি ও হাফ ডজন ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৬১ রান করে অপরাজিত থেকে যান শশাঙ্ক। বেঙ্গালুরুর হয়ে ভুবনেশ্বর কুমার ও ক্রুনাল পান্ডিয়া দু’টি করে এবং হ্যাজেলউড, জশ দয়াল এবং শেফার্ড একটি করে উইকেট নিলেন।