ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর অধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রামী এবং রাজ্য রাজনীতিতে এক বিশাল উপস্থিতি ছিল তাঁর (VS Achuthanandan Passes Away)। ভিএস অচ্যুতানন্দন ২০১৯ সালে ছোটখাটো স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর জনজীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার পর প্রয়াণ (VS Achuthanandan Passes Away)
কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক ভি এস অচ্যুতানন্দন (VS Achuthanandan Passes Away) সোমবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। ২৩ জুন তিনি বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং তার পরেই তাঁকে তিরুবনন্তপুরমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে আইসিইউতে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়।
রাজনৈতিক নেতাদের ঢল, মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গেলেন হাসপাতালে (VS Achuthanandan Passes Away)
ভি এস-এর (VS Achuthanandan Passes Away) প্রয়াণের খবর পেয়ে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা হাসপাতালে পৌঁছাতে শুরু করেছেন।
জনজীবনের লড়াইয়ে আজীবন যোদ্ধা
অচ্যুতানন্দন ছিলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করা এক নেতা। রাজনীতির মঞ্চে তিনি ছিলেন এক অটল ব্যক্তিত্ব। ২০১৯ সালে একবার মৃদু স্ট্রোক হওয়ার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।
আরও পড়ুন: Tamil Nadu: নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষণ! প্রতিবাদে উত্তাল তামিলনাড়ু, জনগণের সাহায্য চাইল পুলিশ
২০২১ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রশাসনিক সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং তারপর থেকে তিরুবনন্তপুরমে তাঁর ছেলে বা মেয়ের বাড়িতে থাকছিলেন।
সিপিএম গঠনের প্রথম সারির নেতা
১৯৬৪ সালে বিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের পর গঠিত সিপিআইএম-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন ভি এস। সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য তাঁর আপোষহীন অবস্থান তাঁকে দলমতের ঊর্ধ্বে একটি জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
আরও পড়ুন: Crypto Platform: ৩৬৮ কোটির ক্ষতি! হ্যাকার হানায় বিপর্যস্ত ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্ম
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিরোধী দলনেতা। ওই সময় তিনি ইউডিএফ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এরপর ২০০৬ সালে সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ-এর নির্বাচনী প্রচারের নেতৃত্ব দেন এবং সরকার গঠন করেন। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
দ্বিতীয়বার সরকার গঠন থেকে অল্পের জন্য পিছিয়ে
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনিই এলডিএফ-এর প্রচারের মূল মুখ ছিলেন। এলডিএফ খুব কাছাকাছি পৌঁছেও দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়। উম্মন চান্ডি-র নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ মাত্র ১৪০টির মধ্যে ৭২টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।
বিতর্কের সঙ্গেই ছিল দীর্ঘ সম্পর্ক
অচ্যুতানন্দন বিতর্ক থেকে কখনও দূরে ছিলেন না। তাঁর ও পিনারাই বিজয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে এবং সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
তিনি একাধিকবার অভিযোগ করেছেন যে, সত্য কথা বলার জন্য তাঁকে দলের পলিটব্যুরো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালে তিনি বলেন, বিজয়ন জড়িত একটি দুর্নীতির মামলায় সত্য প্রকাশ করাই তাঁর অপরাধ। তিনি দলের মধ্যে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, তিনি সত্যের পাশে থাকবেন, দলের বানানো ব্যাখ্যার পক্ষে নয়।
এক অকুতোভয়, আপোষহীন যোদ্ধার বিদায়
ভি এস অচ্যুতানন্দনের মৃত্যু কেবল একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং এক সংগ্রামী, আদর্শনিষ্ঠ, মানুষের নেতা হারানোর বেদনা। সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য যিনি আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন, সেই মানুষটিকে আজ কেরালা ও গোটা ভারত গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে।