ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক ওয়াকফ বোর্ড (Land Donors for Waqf Board)। তারা ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত ব্যবহারের জন্য ৯,৪০,০০০ একর জমি পরিচালনা করে। এর প্রধান দাতাদের মধ্যে রয়েছে নিজাম, মুঘল শাসক এবং ধনী মুসলিমরা।
দেশজুড়ে বিপুল সম্পত্তি (Land Donors for Waqf Board)
ভারতের ওয়াকফ বোর্ডকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে (Land Donors for Waqf Board)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বোর্ডের নামে ৮,৭২,০০০টি অস্থাবর সম্পত্তি নথিভুক্ত ছিল। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে থাকা মোট জমির পরিমাণ ৯,৪০,০০০ একর ছাড়িয়ে গেছে।
এই জমিগুলির মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণের জন্য নির্দিষ্ট অন্যান্য সম্পত্তি। ভারতে এই ওয়াকফ সম্পত্তির বেশিরভাগই মুসলিম শাসক, সুফি সাধক, ধনী ব্যবসায়ী এবং ধর্মীয় নেতাদের দান করা।
ইসলামী আইনের আওতায় চলে ওয়াকফ বোর্ড (Land Donors for Waqf Board)
ওয়াকফ বোর্ড এমন সম্পত্তি পরিচালনা করে যেগুলি ইসলামী আইনের অধীনে শুধুমাত্র ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত (Land Donors for Waqf Board)। একবার কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে গেলে, সেই সম্পত্তি দাতার কাছ থেকে আল্লাহর নামে হস্তান্তরিত হয়ে যায় এবং সেটিকে আর কখনও বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় না।
আরও পড়ুন: Ram Navami In Prayagraj: রামনবমীতে গেরুয়া পতাকা হাতে দরগার মাথায় উঠল যুবক, চলল স্লোগানিং
‘ওয়াকফ’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘ওয়াকুফা’ শব্দ থেকে, যার অর্থ— ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করা বা জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য সম্পদ বরাদ্দ করা। ভারতে ওয়াকফ প্রশাসন অনেকটাই স্বশাসিত, তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে। ভারতে এটি সংখ্যালঘু অধিকার সংক্রান্ত, আর প্রতিবেশী দেশে এটি ইসলামী শাসনের অংশ।
হায়দরাবাদের নিজামেরা ছিলেন বড় দাতা (Land Donors for Waqf Board)
ভারতে ওয়াকফের সবচেয়ে বড় দাতাদের মধ্যে রয়েছেন হায়দরাবাদের নিজামেরা। ‘নিজাম’ শব্দটি ‘নিজাম-উল-মুল্ক’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ রাজ্যের শাসক। হায়দরাবাদের প্রথম নিজাম ছিলেন মীর কামারউদ্দিন খান (১৭২৪-১৭৪৮) এবং শেষ নিজাম ছিলেন মীর ওসমান আলি খান। সপ্তম আসাফ জাহ, নিজাম-উল-মুল্ক আসাফ জাহ VII, ডেকান অঞ্চলে হাজার হাজার একর জমি ওয়াকফে দান করেন।
মন্দিরেও বিশাল অনুদান
নিজাম ওসমান আলি খান শুধু মুসলিম প্রতিষ্ঠান নয়, তিনি ইয়াদগিরিগুট্টা মন্দির, তিরুপতি মন্দির এবং অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে বিশাল অনুদান দেন। দক্ষিণ ভারতে গোলকোন্ডা ও বিজাপুরের সুলতানরাও মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন।
মুঘল আমলেও ওয়াকফে অনুদান
মুঘল শাসক আকবর, শাহজাহান ও আওরঙ্গজেব দিল্লি, আগ্রা ও হায়দরাবাদে ধর্মীয় স্থানের জন্য জমি ওয়াকফে দান করেন। জাহানারা বেগম-এর মতো মুঘল রাজপরিবারের মহিলারাও বিশাল পরিমাণ জমি ওয়াকফে দান করেন।
সুফি সাধকদের ভক্তদের অনুদান
হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (দিল্লি) ও খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (আজমের)-এর মতো সুফি সাধকদের দরগায় প্রচুর জমি দান করা হয়েছে তাঁদের ভক্তদের তরফে। এছাড়া সালার মাসুদ গাজি (বহরাইচ) ও বাবা ফারিদ (পাঞ্জাব)-এর দরগাতেও বড় অনুদান এসেছে।
ধনী ব্যবসায়ী ও জমিদারদের ভূমিকা
ধনী মুসলিম ব্যবসায়ী ও জমিদারদের মধ্যে স্যার সৈয়দ মুহাম্মদ, আহমেদাবাদের ভাকিল পরিবার, এবং আরও অনেকেই ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমি ওয়াকফে দান করেছেন। প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ও উইপ্রো কর্ণধার আজিম প্রেমজি-র নাম উল্লেখযোগ্য, যাঁরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ওয়াকফে অনুদান দিয়েছেন। দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলেমা-র মতো প্রতিষ্ঠান এই দানে লাভবান হয়েছে।
বিতর্কের কেন্দ্রে ওয়াকফ জমি
দেশজুড়ে প্রায় ৯.৪ লক্ষ একর জমি রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে। এই জমি থেকে এখনও বিশাল আয় হয় ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে। দিল্লি, হায়দরাবাদ, লখনউ ও আজমেরে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে।
তবে এত সম্পদের মালিকানা ও ব্যবহারের প্রশ্নে বিতর্ক ও আইনি জটিলতা বারবারই উঠে এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে দখলদারি, আবার কিছু ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত ব্যবহারের অভিযোগ ঘিরে, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ এখন বড় সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।