ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সৌদি আরব (Saudi Arabia)। আমেরিকা ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা সৌদি আরবের রিয়াধে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিতে চলেছেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন এই বৈঠকের স্থান হিসেবে রিয়াধকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সৌদি আরবের কূটনৈতিক গুরুত্ব ফের সকলের নজরে এসেছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের কূটনৈতিক শক্তি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আমেরিকা-রাশিয়া সম্পর্কের পরিবর্তন (Saudi Arabia)
এটি হবে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, যেখানে উভয় দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন (Saudi Arabia)। তারা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিও নেবেন। যদিও উভয় পক্ষই বলছে এই বৈঠকে বড় কোনো অগ্রগতি হবে না, তবুও রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত ইউক্রেন ও ইউরোপের অনেক দেশকে চিন্তিত করেছে।
সৌদি আরব: কূটনৈতিক শক্তির উত্থান (Saudi Arabia)
২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়ে (Saudi Arabia)। তবে এখন সেই ছায়া কাটিয়ে সৌদি আরব আবার আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে। সৌদি আরব আমেরিকার পুরনো বন্ধু হলেও, তারা ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে সৌদি আরব রাশিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী জ্বালানি সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং একদিকে ইউক্রেনকে মানবিক সহায়তাও প্রদান করছে।
সৌদি-আমেরিকা সম্পর্কের পরিবর্তন (Saudi Arabia)
বাইডেন প্রশাসনের সময় সৌদি আরব (Saudi Arabia) আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর রিয়াধের প্রতি আমেরিকার নীতি পাল্টাতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম আন্তর্জাতিক সফর ছিল সৌদি আরবে। এখন সৌদি আরব ট্রাম্পকে স্বাগত জানাচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine War: যুদ্ধ থামাতে বৈঠক ট্রাম্প-পুতিনের, যোগ দিচ্ছেন জেলেন্সকি ও রুবিও
আব্রাহাম চুক্তি ও গাজার পরিস্থিতি
একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ট্রাম্পের “আব্রাহাম চুক্তি” সফলভাবে সম্পন্ন করা। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুরু হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে ইজরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে গাজায় চলা যুদ্ধ এই চুক্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সৌদি আরবকে ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য আরও বেশি মূল্য চাইতে বাধ্য করতে পারে।
সৌদি আরবের জন্য বড় অর্জন
সৌদি সরকারের উপদেষ্টা আলি শিহাবি বলেছেন, “এটি সৌদি আরবের জন্য বিশাল কূটনৈতিক অর্জন। দুই বড় শক্তি নিজেদের বিরোধ মেটাতে রিয়াধকে বেছে নিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এটি সৌদি আরবের নরম শক্তির প্রভাব বাড়াবে।”
শুক্রবার রিয়াধ একটি আরব শীর্ষ সম্মেলনেরও আয়োজন করবে, যেখানে গাজার পরিস্থিতি ও ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।
সৌদি কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
সৌদি আরবের ছোট প্রতিবেশী কাতার ইতিমধ্যেই ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যস্থতা করেছে। এখন সৌদি আরব নিজেকে বিশ্ব কূটনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। কায়রোর আল-আহরাম সেন্টারের বিশ্লেষক রাবা সাইফ আল্লাম বলেন, “সৌদি আরব ইউক্রেন সংকটে পশ্চিমি দেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের সুযোগ নিতে পেরেছে। বিশেষ করে তেলের বাজারে তাদের অবস্থান দৃঢ় হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এর ফলে সৌদি আরব জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর যে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।”
আমেরিকা-রাশিয়া বৈঠক
এই বৈঠকটি হচ্ছে তিন বছরের টানা শীতল সম্পর্কের পর আমেরিকা ও রাশিয়ার প্রথম বড় আলোচনা। একদিকে ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে নিজেদের কৌশল ঠিক করছেন, অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্ক সফর করছেন।
আরও পড়ুন: Jibanananda Das Birthday: জন্মদিনে বরিশালের মানুষ কীভাবে স্মরণ করলেন কবি জীবনানন্দ দাশকে?
রিয়াধে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও কূটনৈতিক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ রিয়াধে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন।
সৌদি আরবের বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্ব বৃদ্ধি
বিশ্লেষক উমের করিম বলেছেন, “এই বৈঠক সৌদি আরবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাকে বিশ্ব কূটনীতির প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।” তিনি আরও বলেন, “এই বৈঠক দেখায় যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন।” ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক মনে করেন, “সৌদি যুবরাজ এখন বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং তার কূটনৈতিক প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে।”
ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং সৌদি আরবের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনার ফলাফল কী হয় এবং সৌদি আরব ভবিষ্যতে বিশ্ব কূটনীতিতে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে।