ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নিউ ইয়র্ক সিটির বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ক্রমাগত অপরাধের শিরোনাম (Will Zohran become next NYC mayor), আবাসন সংকট এবং এথিক্স তদন্তের ভারে ডুবে থাকায়, বামপন্থীরা একটি সুযোগ দেখতে পাচ্ছে।
কে এই জোহারান মামদানি? (Will Zohran become next NYC mayor)
নিউ ইয়র্ক শহরের রাজনীতিতে এখন এক নতুন নাম—জোহরান মামদানি (Will Zohran become next NYC mayor)। চশমাপড়া, পাতলা গড়নের, দেখতে যেন স্থানীয় কোনও ক্যাফের বারিস্তা, কিন্তু আসলে তিনি মেয়রপদের এক সম্ভাব্য প্রার্থী। ৩৩ বছর বয়সী এই যুবক বর্তমানে কুইন্সের অ্যাসেম্বলিম্যান, গৃহনির্বাসিতদের অধিকার রক্ষার অন্যতম মুখপাত্র এবং স্বঘোষিত ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট। এক সময় নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে উঠে আসেন মামদানি। তাঁর এই চমকপ্রদ উত্থানে হেডলাইনগুলোও হয়ে উঠেছে একই রকম চমকপ্রদ। এর মধ্যে রয়েছে “জোহারান মামদানি স্তম্ভিত করলেন কুওমোকে”, “মেয়রপ্রার্থী যিনি স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন হিঞ্জ-এ”, “আমি ট্রাম্পের দুঃস্বপ্ন”।
পরিবার ও শিকড় (Will Zohran become next NYC mayor)
উগান্ডায় জন্ম, ভারতীয় মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা, নিউ ইয়র্কে পড়াশোনা (Will Zohran become next NYC mayor)। তাঁর জীবন যেন ঝুম্পা লাহিড়ীর কোনও উপন্যাসের চরিত্র। মা হলেন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, বাবা একজন অধ্যাপক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। এই দুই মেরু থেকে জন্ম নিয়েছে এক ব্যতিক্রমী প্রচার। ইমিগ্র্যান্ট সংগ্রাম, বলিউড সংস্কৃতি, বাম আদর্শ ও কুইন্সের বাস্তবতার এক অদ্ভুত মিশ্রণ।
কী নিয়ে প্রচার করছেন মামদানি? (Will Zohran become next NYC mayor)
জোহারান মামদানির প্রচার অভিযান শহরের আত্মার জন্য লড়াই বলেই মনে করেন তিনি। বাড়ি ভাড়ার লাগামছাড়া বৃদ্ধি, বিলিয়ন ডলারের ডেভেলপারদের আধিপত্য এবং “বেঁচে থাকার পণ্যে রূপান্তর”-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর নীতিগুলি বামপন্থী ও স্পষ্ট। এর মধ্যে রয়েছে সার্বজনীন আবাসন প্রসার, ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি, বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট ভর্তুকি বন্ধ এবং সামাজিক সেবামূলক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস বারবার সমালোচনার মুখে পড়ছেন। অপরাধ বৃদ্ধি, আবাসন সংকট এবং নৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই জায়গা থেকেই বামপন্থী রাজনীতির পক্ষে একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাস্তবতা ও বাধা
তবে নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে পথ মোটেই সহজ নয়। এখানকার রাজনৈতিক সিস্টেম কঠোর ও অর্থনির্ভর। রিয়েল এস্টেট লবি এখানে শক্তিশালী। অনেক সময় শ্রমজীবী ভোটাররা এলিট প্রগতিশীলদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নন। তবুও মামদানির আছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তাস। এগুলি হল তাঁর স্ট্রিট অ্যাক্টিভিজম, যুবশক্তি এবং তাঁর নাম। তাঁর ২০২০ সালের অ্যাসেম্বলি নির্বাচনের জয় শুরুতে সিম্বলিক বলা হলেও, পরে সেটাই হয়ে উঠেছিল প্রতীকী বিদ্রোহের বাস্তব রূপ।
আরও পড়ুন: Iran Israel Conflict : আমেরিকার গালে থাপ্পড়—যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবার মুখ খুললেন আয়াতোল্লা খামেনেই
ভারতীয় প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
ভারতের জন্য বা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মামদানির সম্ভাব্য জয় হয়তো বড় প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু তাঁর উত্থান এক নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের চিহ্নিত করে, যারা বিশ্বসচেতন, সংবেদনশীল, এবং সাহসী। যদি জেতেন, নিউ ইয়র্ক শহর একটি বাম দিকে তীব্র মোড় নেবে। এতে আতঙ্কিত হবেন বাড়ির মালিকরা, অস্বস্তিতে পড়বে এনওয়াইপিডি-র উচ্চপদস্থরা, আর খুশি হবেন সেই সব নাগরিক যাঁরা বছরের পর বছর কমিউনিটি বোর্ড মিটিংয়ে তাঁদের কথা শোনানোর চেষ্টা করে চলেছেন।
হয়ত জিতবেন না
জোহরান মামদানি হয়তো জিতবেন না। বড় দাতারা এখনও পুরনো চেনা প্রার্থীদেরই সমর্থন দিচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক তার নিজস্ব স্বপ্নদ্রষ্টাদের বারবার দমন করেছে। তবুও তিনি ইতিমধ্যেই এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিচ্ছে। তিনি এখনও মেয়র হননি, কিন্তু শহরের সবাই এখন তাঁর দিকে তাকিয়ে।