ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন(Bangladesh Election)। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে, পবিত্র রমজান শুরুর আগেই দেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই পথেই বুধবার কার্যত প্রশাসনিক যাত্রা শুরু করল অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়ে ভোট আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছে ইউনূসের দফতর।
চিঠিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। বাংলাদেশ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, এই চিঠি পাঠিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্যসচিব এম সিরাজউদ্দিন মিঁয়া(Bangladesh Election)। তিনি কমিশনকে বলেন, ‘‘প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’’
এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আনুষ্ঠানিক অনুরোধের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হল বলে মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল।
হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তিতে বার্তা (Bangladesh Election)
গত ৫ অগস্ট ছিল সেই ঐতিহাসিক দিন, যেদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকারের পতন ঘটেছিল। গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছিল দীর্ঘ দেড় দশকের সরকার(Bangladesh Election)। এক ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন, এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস।
এই দিনটির এক বছর পূর্তিতে ইউনূস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, “এবার আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সময়— তা হল, নির্বাচন আয়োজন করা।”
তিনি আরও জানান, ২০২৬ সালের পবিত্র রমজানের আগেই দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজিত হবে। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হল।
‘৩৬ জুলাই’ উদ্যাপন এবং ঐতিহাসিক স্বীকৃতি (Bangladesh Election)
ভাষণের আগে রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় — যার শিরোনাম ছিল ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’(Bangladesh Election)। সেখানে ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করে জানান,“২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভকে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে।”
এই আন্দোলনের ফলেই বাংলাদেশে এক নতুন রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত হয়েছে। শেখ হাসিনার জমানায়, যে সময় নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার বহুবার খর্ব হয়েছে বলে ইউনূস অভিযোগ করেন, তার অবসান ঘটেছে এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

সামনের পথ এবং রাজনৈতিক বার্তা (Bangladesh Election)
জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইউনূস বলেন,“গণতন্ত্রের মূলে রয়েছে নির্বাচন(Bangladesh Election)। বিগত দেড় দশকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশের মানুষ। এবার আমাদের কাজ সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।”
তাঁর সরকার সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। এই নির্বাচন হবে এমন এক ভিত্তি, যার উপর ভবিষ্যতের সরকার গঠিত হবে একদম জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী — এমনটাই স্পষ্ট করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: Uttarakhand Cloudburst : কী এই মেঘভাঙা বৃষ্টি ?কেন উত্তরাখন্ড ও হিমাচলে বেশি হয় ?
নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ(Bangladesh Election)
অন্তর্বর্তী সরকারের এই ঘোষণা এবং অনুরোধের প্রেক্ষিতে এখন সব নজর নির্বাচন কমিশনের দিকে(Bangladesh Election)। তারা কীভাবে এত কম সময়ের মধ্যে, বিশেষ করে রমজানের আগে, বিশ্বস্ত ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে, তা দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ।
বিশ্লেষকদের মতে, একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনই হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জন্মের মাইলফলক।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছ ও সময়োচিত উদ্যোগে দেশবাসী নতুন আশার আলো দেখছেন — গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সেই বহু কাঙ্ক্ষিত দিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়।