ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ১৭ বছর পর মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর ওরফে সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সাত অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করে দিল এনআইএ আদালত(Malegaon Blast Case)। বৃহস্পতিবার আদালত তার রায়ে বলেছে, শুধুমাত্র সন্দেহের বশে মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয়েছে, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলেও জানিয়েছে আদালত। এছাড়াও মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক এ কে লাহোটি জানিয়েছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হওয়া বাইকটি যে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুরের তার কোনও প্রমাণ মেলেনি।
মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার রায় (Malegaon Blast Case)
২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মালেগাঁওয়ের ভিকু চকের বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত হন, জখম হন ১০১ জন(Malegaon Blast Case)। জানা গিয়েছিল, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বাইকের সঙ্গে আটকানো ছিল দুটি বোমা। প্রথমে অভিযোগ উঠেছিল বাইকটি সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুরের। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগের কোনও প্রমাণ নেই জানিয়ে দিল আদালত। রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কারণে এই মামলাটি সারা ভারতের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।অভিযুক্তদের তালিকায় প্রধানত ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, অবসরপ্রাপ্ত মেজর রমেশ উপাধ্যায়, সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত, সুধাকর চতুর্বেদী, অজয় রাহিকর, সুধাকর ধর দ্বিবেদী এবং সমীর কুলকার্নি।এদের প্রত্যেকেই মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলা থেকে রেহাই দিল মুম্বইয়ে এআইএ-এর বিশেষ আদালত।

‘কোনও প্রমাণই বিশ্বাসযোগ্য নয়’ (Malegaon Blast Case)
বৃহস্পতিবার বিচারকের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে ‘কোনও প্রমাণই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ বিচারক একে লাহোটি বলেন, ‘সমাজে এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। কিন্তু কেবল নৈতিকতার যুক্তিতে আদালত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে না(Malegaon Blast Case)।’ এক দশক ধরে চলা মামলায় ৩২৩ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আদালতে দাবি, বাইকের মধ্যেই যে দুটি বোমা ছিল তা সরকারি আইনজীবী প্রমাণ করতে পারেননি। আরডিএক্স কে এনেছিল কে রেখেছিল তাও জানা যায়নি। ফলে প্রমাণের অভাবেই মিলল অভিযুক্তদের মুক্তি। মামলার রায় দানে আদালত বলেছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা সরকার পক্ষকে সমর্থন করেননি। সরকারপক্ষ ষড়যন্ত্রের প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।’
আরও পড়ুন-Army: ‘সুড়ঙ্গ-সন্ত্রাসবাদ’ ব্যর্থ! কেন কাশ্মীর ছাড়তে পারেনি পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা?
২০১৮ সালে বিচার শুরু (Malegaon Blast Case)
প্রাথমিকভাবে মহারাষ্ট্র অ্যান্টিটেরোরিস্ট স্কোয়াড কর্তৃক তদন্তের পর, মামলাটি নাটকীয় মোড় নেয়(Malegaon Blast Case)। এটিএস বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে ১১ জনকে। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, অবসরপ্রাপ্ত মেজর রমেশ উপাধ্যায়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত। যদিও তারা জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন এবং পরে তাদের জামিন দেওয়া হয়েছিল।২০১১ সালে মামলাটি জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-এর কাছে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে এই মামলার পুনরায় রেজিস্ট্রেশন হয় এবং আরও তদন্ত পরিচালনা শুরু হয়। তারপর থেকে একাধিক চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের পর ২০১৮ সালে বিচার শুরু হয়।

সাক্ষীর ভূমিকা (Malegaon Blast Case)
বিচার চলাকালীন, আদালত ৩২৩ জন প্রসিকিউশন সাক্ষী এবং ৮ জন আসামিপক্ষের সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে(Malegaon Blast Case)। তদন্তের সময় বাজেয়াপ্ত করা ১০,৮০০ টিরও বেশি প্রমাণ এবং ৪০০ টিরও বেশি জিনিসপত্র-সহ বিপুল সংখ্যক সামগ্রী জমা দেওয়া হয়েছিল। বিচার চলাকালীন প্রায় ৪০ জন সাক্ষী এর বিরোধিতা করে।২০২৫ সালের এপ্রিলে বাদি ও বিবাদি পক্ষের বক্তব্য সমাপ্ত হয়। প্রসিকিউশন ১,৩০০ পৃষ্ঠারও বেশি বিস্তৃত লিখিত যুক্তিতর্ক, আইনি উদ্ধৃতি এবং প্রামাণ্য প্রমাণ-সহ জমা দেয়। মুম্বইয়ের বিশেষ এনআইএ আদালতের বিচারক এ কে লাহোটি বৃহস্পতিবারের রায় ঘোষণা করেন। সব অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন-IAS Officer’s Viral Video: আইনজীবীদের শান্ত করতে ওঠবস আইএএস অফিসারের! ভাইরাল ভিডিওয় বিতর্ক
মালেগাঁও বিস্ফোরণ ও অভিযুক্তরা (Malegaon Blast Case)
ভোপালের প্রাক্তন সাংসদ সদস্য সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ২০০৮ সালের অক্টোবরে গ্রেফতার করা হয়েছিল(Malegaon Blast Case)। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বাইকটি তাঁর নামে কেনা ছিল। মহারাষ্ট্র এটিএস দাবি করেছিল পূর্ববর্তী সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিকে লক্ষ্য করে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিলেন তিনি।তার বিরুদ্ধে পুরো বিস্ফোরণ পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলে, বোম্বে হাইকোর্ট বিস্ফোরণের সাত অভিযুক্তকেই জামিন দেয়। আদালত ৫ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে প্রজ্ঞাকে জামিন দেয়। জামিন পাওয়ার পর বিজেপি মধ্যপ্রদেশের ভোপাল আসনে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করে।লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুরোহিত তখন মিলিটারি ইন্টালিজেন্সে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিনব ভারত নামে একটি উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীকে রসদ ও উপকরণ সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই রসদ মালেগাঁও বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল এতদিন।
