ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গাড়িতে থাকা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে (First Openly Gay Imam Murdered)। বিশ্বের প্রথম ঘোষিত সমকামী ইমাম হিসেবে পরিচিত মুহসিন হেন্ড্রিকসকে শনিবার গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার গেকুয়েবারহা (আগে পোর্ট এলিজাবেথ নামে পরিচিত) শহরের কাছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হেন্ড্রিকস একজন সঙ্গীর সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন (First Openly Gay Imam Murdered)। সেই সময় একটি গাড়ি এসে তাদের পথ আটকে দেয়। পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “অজ্ঞাতপরিচয় দু’জন ব্যক্তি মুখ ঢেকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে একাধিকবার গুলি চালায়।” এরপর হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। গাড়ির চালক তখন দেখেন, গাড়ির পেছনে বসে থাকা মুহসিন হেন্ড্রিকসের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনো অজানা। তবে তদন্ত চলছে এবং এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সমকামী ও প্রান্তিক মুসলিমদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় (First Openly Gay Imam Murdered)
মুহসিন হেন্ড্রিকস দীর্ঘদিন ধরে সমকামী ও অন্যান্য প্রান্তিক মুসলিমদের জন্য নিরাপদ প্রার্থনার জায়গা তৈরি করেছিলেন (First Openly Gay Imam Murdered)। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় আল-ঘুরবা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে সমকামী মুসলিম ও সমাজে অবহেলিত নারীরা মুক্তভাবে ইসলাম চর্চা করতে পারতেন।
আন্তর্জাতিক নিন্দা ও ন্যায়বিচারের দাবি (First Openly Gay Imam Murdered)
হেন্ড্রিকসের হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে (First Openly Gay Imam Murdered)। আন্তর্জাতিক লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্স এবং ইন্টারসেক্স অ্যাসোসিয়েশন (ILGA) এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। ILGA-এর নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া আর্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা মুহসিন হেন্ড্রিকসের হত্যার খবর শুনে গভীরভাবে শোকাহত। এটি সম্ভবত একটি বিদ্বেষমূলক অপরাধ (হেট ক্রাইম)। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।”
আরও পড়ুন: Musk Breaks Silence: এলন মাস্কের সন্তানের মাতৃত্বের দাবি! মুখ খুললেন টেসলার সিইও
১৯৯৬ সালে প্রকাশ্যে আসেন সমকামী হিসেবে
১৯৯৬ সালে মুহসিন হেন্ড্রিকস প্রথমবার নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি নিজের শহরে সমকামী মুস্লিমদের জন্য বৈঠকের আয়োজন শুরু করেন। তখন থেকেই তাকে মুসলিম সমকামীদের ইমাম হিসেবে সম্মান করা হতো। হেন্ড্রিকস গার্ডিয়ানকে ২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি আমার গ্যারেজ খুলে একটি কার্পেট বিছালাম। এরপর মানুষকে চা খেতে ও আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানালাম।”
নিজস্ব মসজিদ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত
২০১১ সালে এক বন্ধু একটি খুতবায় সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রচার শুনে কষ্ট পান। তখন হেন্ড্রিকস সিদ্ধান্ত নেন, একটি আলাদা প্রার্থনার স্থান তৈরি করবেন। তিনি বলেন, “আমি ভাবলাম, হয়তো সময় এসেছে আমাদের নিজেদের জায়গা তৈরি করার, যাতে মানুষ কোনো ভয় ছাড়াই নামাজ পড়তে পারে।”
হুমকির মুখে ছিলেন হেন্ড্রিকস
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া “দ্য র্যাডিকাল” নামক একটি ডকুমেন্টারিতে মুহসিন হেন্ড্রিকস নিজের বিরুদ্ধে আসা হুমকির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমাকে নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।”
বৈচিত্র্যময় জীবন ও ব্যক্তিগত সংগ্রাম
মুহসিন হেন্ড্রিকস একজন আরবি ভাষার শিক্ষক ও ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন। তিনি একসময় একজন নারীকে বিয়ে করেন এবং সন্তানও ছিল। তবে বিয়ের আট বছর পর, নিজের বাবার মৃত্যুর পরে, তিনি তার আসল যৌন পরিচয় প্রকাশ করেন। এরপর তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন।
রক্ষণশীল গোষ্ঠীর রোষে
মুহসিন হেন্ড্রিকস একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি সমকামী মুসলিমদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করেছিলেন। তবে তার এই সংগ্রাম সমাজের রক্ষণশীল গোষ্ঠীর রোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এখন প্রশ্ন হলো, তার হত্যার পেছনে কে বা কারা রয়েছে, এটি কি নিছক অপরাধ নাকি বিদ্বেষমূলক হামলা? পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তার অনুগামীরা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাইছে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হোক।