ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ভাষা (Mother Language Day in Bangladesh) আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে দিনটি উদযাপন করা হয়। এই দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
রাষ্ট্রপতির কর্মসূচিতে নেই ছাড়পত্র (Mother Language Day in Bangladesh)
এই বছর, শহিদ মিনারে ফুলের স্তবক রেখে প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন (Mother Language Day in Bangladesh) করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। কিন্তু এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি ছোট সংগঠন রাষ্ট্রপতির আগমন মেনে নেয়নি, কারণ পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে নিয়োগ করেছিলেন। এই কারণে গোয়েন্দা পুলিশ রাষ্ট্রপতির কর্মসূচিতে ছাড়পত্র দেয়নি।
আম জনতার বিধি নিষেধ (Mother Language Day in Bangladesh)
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী (Mother Language Day in Bangladesh) সরকারও পিছিয়ে থাকেনি। মহানগর পুলিশের কমিশনার জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, আম জনতার জন্য কিছু বিধি নিষেধও রয়েছে। রাত ১২টা ৪০-এর আগে জনগণের শহিদ মিনারে আসা নিষেধ। এতে করে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক চাপের প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুন: International Mother Language Day: সমগ্র বাঙালি জাতির ‘অমর একুশে’, কী ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস?
কলকাতায় ভাষা দিবসের ঘরোয়া অনুষ্ঠান (Mother Language Day in Bangladesh)
কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে এবারের একুশের অনুষ্ঠানটি (Mother Language Day in Bangladesh) ঘরোয়া আকারে অনুষ্ঠিত হবে। কূটনীতিক ও কর্মীরা একান্তভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আগের মতো শোভাযাত্রা হবে না এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। এটা স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণে কম উৎসাহ সেটা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে।
সীমান্তে হচ্ছে না অনুষ্ঠান
অন্যদিকে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একুশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই বছর হচ্ছে না। পূর্বে এই সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মীরা একত্রে অনুষ্ঠান করতেন, কিন্তু এবারে সেই ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে, কিন্তু এতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নেই।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের শাসকরা বাংলাভাষীদের উপর উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। সেই আন্দোলন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তবে, বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আগের ইতিহাসের সঙ্গে মেলেনা। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও গাঢ় করতে চাইছে, যা দেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
ইতিহাস ভুলে ভবিষ্যৎ গড়া যায় না
শহিদ মিনারে একুশের অনুষ্ঠান এই বছরে নতুন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। ভাষার অধিকার ও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশের দিকে দৃষ্টি দেওয়াও জরুরি। ভাষা শহিদদের স্মরণে এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানো সম্ভব নয়।