ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদিকে(Salman Rushdie) ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। তাঁর নাম হাদি মাতার। শুক্রবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের চাটাউকুয়া কাউন্টির আদালত। আগামী ২৩ এপ্রিল সাজা ঘোষণা করা হবে। অনুমান করা হচ্ছে ৩০ বছরের জেল হতে পারে হাদির।
সালমান রুশদির উপর আক্রমণ (Salman Rushdie)
২০২২ সালের ১২ অগাস্ট নিউইয়র্কের চাটাকুয়া ইনস্টিটিউশনে (Chautauqua Institution) বক্তৃতা দিতে গিয়েছিল ইন্দো-ব্রিটিশ লেখক রুশদি(Salman Rushdie)। বক্তৃতা দিতে ওঠার ঠিক আগেই গাঢ় রংয়ের পোশাক এবং মুখোশ পরা হাদি মাতার মঞ্চে উঠে পড়েন এবং লেখকের উপর একাধিকবার ছুরি চালান। রুশদির গলায় তিনটি, পেটে চারটি আঘাত লাগে। আঘাত লাগে ডান চোখ এবং বুকেও। ওই হামলার জেরেই ডান চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং একটি হাতের ব্যবহার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুশদিকে দ্রুত উত্তর-পশ্চিম পেনসিলভ্যানিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। তখনই বোঝা যায় যে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর, ক্ষতি হয়েছে চোখ এবং হাতের শিরার।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাস (Salman Rushdie)
১৯৮৮ সালে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাস লিখেছিলেন রুশদি(Salman Rushdie)। বিতর্কিত এই উপন্যাসের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ইরানের ধর্মীয় নেতা ‘মৃত্যু ফতোয়া’ জারি করেছিলেন। অজস্র বার খুনের হুমকি পেয়েছিলেন রুশদি। হামলার ভয়ে প্রায় ন’বছর আত্মগোপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে প্রকাশ্যে আসেন, কিন্তু থাকতেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। সেই উপন্যাস লেখার প্রায় ৩৫ বছর পর আমেরিকার মঞ্চে তাঁর উপর হামলা হয়।
আরও পড়ুন: Donald Trump: আমেরিকান সংস্থার থেকে ডিজিটাল কর নেয় কারা? পাল্টা শুল্কের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
কে এই হাদি?
নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ-এর বাসিন্দা ২৪ বছরের হাদি। তার মা সিলভানা ফারদোস পুলিশকে বলেছিলেন, লেবাননবাসী বাবার সঙ্গে দেখা করতে লেবানন পাড়ি দিয়েছিল হাদি। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পরেই তার আচার আচরণে বদল আসে। একটা ঘরে নিজেকে বন্দি করে ফেলেছিল। কারও সঙ্গে কথা বলত না। রাত হলেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যেত। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আগ্রহ বেড়েছিল। কিন্তু কাদের প্ররোচনায় ও কেন সে সলমন রুশদিকে খুন করার চেষ্টা করল তা এখনও কেউ বুঝতে পারছেন না।
আয়াতোল্লা রুহোল্লার আদর্শেই অনুপ্রাণিত?
হামলাকারী মাতার পরে জানান, তিনি ভাবতে পারেননি রুশদি(Salman Rushdie) ওই হামলার পরেও প্রাণে বেঁচে যাবেন। রুশদির লেখা ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ (Satanic Verses) বইয়ের উপর ফতোয়া জারি করেছিলেন ইরানের প্রয়াত সর্বময় নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি (Ayatollah Ruhollah Khomeini)। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই কি হামলা? এই প্রশ্নের উত্তরে মাতার বলেন, “আমি আয়াতোল্লাকে শ্রদ্ধা করি, তিনি একজন মহান মানুষ। এ নিয়ে এর বেশি কিছু বলব না।” হামলাকারী এও জানান, রুশদির বিতর্কিত বইয়ের মাত্র দুটি পৃষ্ঠাই পড়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: US-Saudi Relation: সৌদির মার্কিন প্রেম! রাজা হতে গিয়ে খাদের কিনারে যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন?
১৫ বার ছুরিকাঘাত
৭৭ বছর বয়সী স্যার সালমান সাক্ষ্যে বলেছেন, তিনি ঐতিহাসিক শাটাকোয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখেন। ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, হামলাকারীর চোখ দেখে তিনি মুষড়ে পড়েন। ওই চোখ গাঢ় কালো ছিল জানিয়ে লেখক বলেন, তা খুব হিংস্রও ঠেকছিল। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, তাকে ঘুষি মারা হয়েছে, পরে তিনি বুঝতে পারেন যে- তাকে মোট ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে- তার চোখ, গাল, ঘাড়, বুক, ধড় ও উরুতে ক্ষত রয়েছে।
একজনকেই নিশানা করা হয়েছিল
শুক্রবার শুনানির সমাপনী যুক্তিতর্ক চলাকালে কৌঁসুলি জেসন স্মিড হামলার একটি ভিডিও স্লো-মোশনে দেখান। আদালতে স্মিড বলেন, “আমি চাই, আপনারা হামলার নিশানার ধরন খতিয়ে দেখুন। “সেদিন আশেপাশে অনেক লোক ছিল, কিন্তু সেখানে কেবল একজনকেই নিশানা করা হয়েছিল।” দুই সপ্তাহের শুনানি চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যান্ড্রু ব্রুটিগান যুক্তি দেন যে, মাতার স্যার সালমানকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন-এমনটা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন কৌঁসুলিরা। তার আইনজীবীরা নিজেদের কোনো সাক্ষীকে ডাকতে চাননি এবং মাতার আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি।