অভ্রদ্বীপ দাস, কলকাতা: ট্যাংরা-কাণ্ডে (Tangra Murder Case) চাঞ্চল্যকর মোড়। কাকা প্রসূন দে মা ও কাকিমার হাতে শিরা কেটেছেন। শনিবার বেসরকারি হাসপাতালে নাবালক প্রতীপ দে-র সঙ্গে কথা বলার সময়ই পুলিশের কাছে উঠে আসে এই তথ্য। পুলিশ আধিকারিকদের প্রতীপ জানায়, বাবা প্রণয় দে নন, কাকা প্রসূন দে-ই মা সুদেষ্ণা ও কাকিমা রোমির হাতের শিরা কেটে খুন করেছেন। এমনকী, কাকা প্রসূন তার বাবারও হাত কাটেন। বাদ পড়েনি প্রতীপও।
গত মঙ্গলবার হাত কাটার যন্ত্রণায় ছেলেটি ঘুম থেকে উঠে পড়ে। বুঝতে পারে, ছুরি দিয়ে তার হাতও কেটেছে কাকা। তার সামনেই কাকা প্রসূন নিজের হাত কাটার চেষ্টা করেন (Tangra Murder Case) । প্রতীপ তখন চিৎকার করে ওঠে। শনিবার সন্ধ্যায় বড় ভাই প্রণয় দে-কে বাইপাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালে থেকে ছাড়িয়ে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (নীলরতন)-এ নিয়ে এসে ভর্তি করেছে পুলিশ। ওই নাবালকের দাবি, তিনটি উপায়ে আত্মঘাতী হওয়ার ছক কষেন তার বাবা ও কাকা। রেললাইনের কাছে গাড়ি থামিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ বা গঙ্গায় কাঁপ দেওয়ার অথবা উলুবেড়িয়ার কাছে লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কার পরিকল্পনাও করা হয়।
এই তিন উপায় কার্যকর না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সায়েন্স সিটি হয়ে বাইপাসে আসার পর মেট্রো রেলের পিলারে গাড়ির ধাক্কা দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। গাড়িতে বাবা ও কাকার আলোচনা থেকেই এই তথ্যগুলি প্রতীপ জেনেছে, পুলিশের দাবিও এমনটাই।
প্রসূন দে-ই খুনি? (Tangra Murder Case)
ট্যাংরার (Tangra Murder Case) অতুল সুর স্ট্রিটে অভিজাত দে পরিবারের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় দুই ছেলের দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা ও রোমির হাতের শিরা কাটা রক্তাক্ত দেহ। বস্তুত প্রণয়ের ১২ বছরের নাবালক ছেলে প্রতীপের বয়ানে তদন্তের নতুন রাস্তাই খুলে গেল। সেই বয়ানের ভিত্তিতেই প্রসূন-প্রণয়কেও জেরা হবে। প্রতীপ পুলিশকে যেমনটা জানিয়েছে। তা হল, মঙ্গলবার ঘুম ভাঙার পরই সে দেখেছিল, এক ঘরে মা, অন্য ঘরে কাকিমা রক্তাক্ত অবস্থায় শুয়ে আছেন। অন্য ঘরে পড়ে খুড়তুতো দিদির দেহ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: হাজরা রোডে পলাশ গাছের সারি, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় সাজবে তিলোত্তমার রাস্তা!

আগের রাতেই সে জানত যে, তাকে আর দিদিকে যে পায়েসটি খাওয়ানো হয়েছে, তাতে ওষুধ মেশানো হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে। একতলায় হলঘরে গিয়ে বাবা প্রণয় ও কাকা প্রসূনকে বসে থাকতে দেখে (Tangra Murder Case)। তার বাবার কবজির কাছেও কাটা দাগ। পরিবারের বড়রা যে আত্মহত্যার প্লট সাজিয়েছেন, তা জানত সে। সে বুঝতে পারে, আরও সাংঘাতিক কিছু হতে চলেছে। ছেলেটি কান্নায় ভেঙে পড়ে তার বাবা ও কাকাকে বলে, “আমি বাঁচতে চাই। মরব না।” তখন দুই ভাই মিলে প্রতীপকে অনেকক্ষণ ধরে বোঝান, কেন তাঁরা নিজেদের শেষ করে দিতে চাইছেন। ‘বংশের শিবরাত্রির সলতে’ প্রতীপের মৃত্যু চাননি প্রণয় ও প্রসূন। যেহেতু প্রতীপের হাত কাটা ছিল, তাই তাকে পরে একটি হাসপাতালে পৌঁছে দিতে চান প্রণয়। কিন্তু বাবা-কাকাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চায়নি প্রতীপ।
আরও পড়ুন: Hoogly Chanditala IC: দেশি পিস্তল থেকেই চলে গুলি, চণ্ডীতলা IC গুলিবিদ্ধর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
যেহেতু প্রতীপের দাদু-দিদা মারা গিয়েছেন ও মামা মুম্বইয়ে থাকেন, তাই প্রসূন হরিদেবপুরে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ভাইপোকে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রতীপ তখনও জানায়, সে বাবা-কাকাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। সারাদিন বাবা-কাকার সঙ্গে বাড়িতে শুকনো খাবার খেয়েই থাকে সে (Tangra Murder Case) । মঙ্গলবার রাত ১২টা ৫১ মিনিটে প্রতীপকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রণয়-প্রসূনের সঙ্গে ছিল মদের বোতল। এর পর তাঁরা আত্মঘাতী হতে আড়াই ঘণ্টা সময় নিলেন কেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সল্টলেকে তেল ভরে রাজারহাটে যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে মদ্যপান করেন প্রণয়।