ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২০২৩ সালের ১৯শে নভেম্বর আহমেদাবাদের বদলা ২০২৫ সালের ৪ মার্চ দুবাইয়ে। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত (India beats Australia)। সেইসঙ্গে ২০২৩ সালে আহমেদাবাদে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল রোহিত বাহিনী। মঙ্গলবার ১১ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নিল ভারত। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ছক্কা মেরে জয় এনে দিলেন কেএল রাহুল।
বল হাতে মহম্মদ শামি ও বরুণ চক্রবর্তী,রবীন্দ্র জাদেজা যে কাজ শুরু করেছিলেন তা শেষ করলেন বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আইয়ার, রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া। বিরাট আবারও প্রমাণ করে দিলেন যে তিনিই ‘বড় মঞ্চের খিলাড়ি’, তিনিই ‘কিং’ এবং তিনিই ‘চেজ মাস্টার’। তবে একটাই আফসোস, পাকিস্তান ম্যাচের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অল্পের জন্য ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিটা হাতছাড়া হলো। তবে শেষ ভালো যার সব ভালো তার।
আরও পড়ুন: Vinicius Jr Big Hint: রিয়াল মাদ্রিদেই থাকছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র?
ভারত অধিনায়ক হিসেবে অনন্য নজির রোহিতের (India beats Australia)
এদিনের এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব ক্রিকেটে অনন্য নজিরও গড়লেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনিই হলেন এই মুহূর্তে বিশ্বের একমাত্র অধিনায়ক যাঁর নেতৃত্বে ভারত আইসিসি’র চারটি প্রতিযোগিতারই ফাইনালে উঠল। ২০২৩ সালে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ভারত। দুটিতেই রানার্স হয় ভারত। ২০২৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। (India beats Australia) এবার ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠল ভারত। এই চার ফাইনালেই ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি ছাড়া বিশ্বের কোনও দেশের কোনও অধিনায়কের এই নজির নেই। সেই সঙ্গে এদিন রেকর্ডবুকে নাম লেখালো ভারতীয় ক্রিকেট দলও। আইসিসি’র যে কোনও ওয়ানডে টুর্নামেন্টের নকআউটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এটাই সর্বাধিক রান তাড়া করে জয় ভারতের।
পাকিস্তানে নয়, ৯ মার্চ ফাইনাল দুবাইয়ে(India beats Australia)
ভারতের জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানেরও কপাল পুড়ল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল যে আয়োজক পাকিস্তানের মাটিতে হচ্ছে না, ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়া হারতেই তাতেও সিলমোহর পড়ে গেল। আগামী ৯ মার্চ দুবাইয়ের এই মাঠেই বুধবার অপর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বিজয়ীর বিরুদ্ধে ফাইনালে নামবে ভারত।
বিরাটের ব্যাটেই বিদায় অজিদের (India beats Australia)
অস্ট্রেলিয়ার ২৬৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৯৮ বলে ৫ বাউন্ডারির সাহায্যে ৮৪ রান করে ভারতের ফাইনালে ওঠার পথ মসৃণ করে দেন ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি। জাম্পার বলে ডরসুইশের হাতে ক্যাচ দিয়ে অল্পের জন্য নিজের ৫২তম ওয়ানডে শতরানটা হাতছাড়া করলেন বিরাট। আর সেটা হলে তিনি আর রাহুল মিলেই ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারতেন।শুভমন গিল (৮) দ্রুত ফিরে গেলেও অধিনায়ক রোহিত শর্মা ২৮, শ্রেয়স আইয়ার ৪৫, অক্ষর প্যাটেল ২৭ রান করে বিরাটকে যোগ্য সঙ্গত দেন। ২৫৯ রানের মাথায় বিরাট যখন আউট হন তখনও ভারতের জয়ের জন্য ৪৪ বলে ৪০ রান দরকার ছিল।
দুরন্ত ব্যাটিং শ্রেয়স-রাহুল-হার্দিকের (India beats Australia)
শেষে হার্দিক পান্ডিয়া ২৪ বলে এক বাউন্ডারি ও ৩ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ঝোড়ো ২৮ রানের ইনিংস খেলে ভারতের জয় সহজ করে দেন। হার্দিক যখন এলিসের বলে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ততক্ষণে ভারত ম্যাচ পকেটে পুড়ে ফেলেছে (India beats Australia)। ১৩ বলে দরকার ছিল ৬ রান। ৪৯ তম ওভারের প্রথম বলেই ম্যাক্সওয়েলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে জয় এনি দেন রাহুল। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ম্যাচের পর এদিনও ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে ২টি বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৪ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থেকে ভারতকে ফাইনালে তুলে মাঠ ছাড়লেন রাহুল। তাঁর সঙ্গে শেষে ২ রান করে অপরাজিত থেকে যান রবীন্দ্র জাদেজা। ৪৮.১ ওভারেই ৬ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এলিস ও জাম্পা ২টি করে এবং কোনোলি ও ডরসুইশ একটি করে উইকেট পান।
আরও পড়ুন: KKR New Captain: নাইট রাইডার্সের নয়া জার্সি, নয়া ক্যাপ্টেন! শ্রেয়সের জায়গায় এবার নিল কে?
অনবদ্য বোলিং শামি-বরুণ-জাদেজাদের (India beats Australia)
মঙ্গলবার দুবাইয়ে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। স্লো টার্নিং উইকেটের কথা মাথায় রেখে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের প্রথম একাদশ অপরিবর্তিত রেখেছিল ভারতও। অর্থাৎ এদিন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও ৪ স্পিনার ও এক পেসার নিয়েই নেমেছিল ভারত। কিন্তু অজি অধিনায়ক স্মিথের ৯৬ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে করা ৭৩ রান ও অ্যালেক্স ক্যারির ৫৭ বলে ৮ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৬১ রানের ইনিংসে ভর করে ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।(India beats Australia) যদিও ৩ বল বাকি থাকতেই অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনার ট্রাভিস হেডকে (৩৯) এদিন মাথাচারা দিতে দেননি বরুণ চক্রবর্তী। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাঁকে ফিরিয়ে দেন বরুণ। যদিও ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই হেডের ক্যাচ মিস করেন শামি। মার্নাস লাবুশানে ২৯, জোশ ইংলিস ১১, ম্যাক্সওয়েল ৭, বেন ডরসুইশ ১৯, জাম্পা ৭ ও নাথান এলিস ১০ রান করেন। ভারতের হয়ে মহম্মদ শামি ৩টি, বরুণ চক্রবর্তী ২টি, রবীন্দ্র জাদেজা ২টি এবং অক্ষর প্যাটেল ও হার্দিক পান্ডিয়া একটি করে উইকেট নেন।
তারমধ্যে সবথেকে বড় উইকেট স্মিথের। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্মিথকে যদি বোল্ড না করতেন তাহলে অস্ট্রেলিয়ার রান তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যেত। যদিও নিজের বলে হেডের পাশাপাশি স্মিথের ক্যাচ না ফেললে উইকেট সংখ্যা আরও বাড়তেই পারতো শামির। এদিন রোহিত শর্মারও দু’টো ক্যাচ ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। কোহলির ক্যাচ ফেলেছেন ম্যাক্সওয়েল। আর তাতেই অস্ট্রেলিয়ার এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল