ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে গত ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণের পর কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সেই নিয়ে ধন্ধে ছিল অতি বড় নাইট সমর্থকরাও। কিন্তু সেই আশঙ্কাকে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিয়ে আবারও জয়ের সরণীতে ফিরল কেকেআর। সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৮০ রানে হারিয়ে চলতি মরশুমে ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম জয় তুলে নিল শাহরুখ খানের দল।
কেকেআরের (Kolkata Knight Riders) ২০১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১৬.৪ ওভারে ১২০ রানেই গুটিয়ে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। শুধু জয়ে ফেরাই নয়, রানরেটো অনেকটা বাড়িয়ে পয়েন্ট টেবিলের শেষ থেকে ৫ নম্বরে উঠে এলো নাইট বাহিনী। মুম্বইয়ের কাছে হারের পর নাইটদের রানরেট মাইনাস একের বেশি হয়েগিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সানরাইজার্সকে হারানোয় চার ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ৫ নম্বরে উঠে এল নাইটরা। অজিঙ্কা রাহানের দলের বর্তমান রানরেট মাইনাস থেকে প্লাস হয়ে দাঁড়ালো ০.০৭০।
ইডেনে জিতে নজির কলকাতার (Kolkata Knight Riders)
বৃহস্পতিবার ইডেনে মুখোমুখি হয়েছিল গতবারের ফাইনালিস্ট দুই দল। গতবার এই সানরাইজার্সকে হারিয়েই আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেকেআর (Kolkata Knight Riders)। এই ম্যাচে নামার আগে দুই দলই তিন ম্যাচে একটি করে ম্যাচ জিতে একই জায়গায় ছিল। একেই ইডেনের পিচ নিয়ে চলা দীর্ঘ বিতর্ক, তার মধ্যে দলের জঘন্য পারফরমেন্সে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ছিল কেকেআর। তাই এদিনের ম্যাচকে ঘিরে কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা অনেকটাই কম ছিল। ৬৭ হাজারের মধ্যে এদিন ইডেনের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৩৪ হাজার সমর্থক। কিন্তু মাঠে আসা সমর্থকদের এদিন আর হতাশ করেননি রাহানে, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, বরুণ চক্রবর্তীরা। দলের জয় দেখেই মাঠ ছাড়লেন সকলে।

দীর্ঘ পিচ বিতর্কের পর সিএবি জানিয়েছিল টার্নিং উইকেটেই তৈরি করা হবে। তবুও এদিন টসে জিতে সানরাইজার্স অধিনায়ক তথা প্রাক্তন নাইট পেসার প্যাট কামিন্স কেন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন বোঝা গেল না। তবে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি কেকেআর-এর (Kolkata Knight Riders)। আড়াই ওভারে ১৬ রানের মধ্যেই দুই ওপেনার কুইন্টন ডি’কক এবং সুনীল নারিনের উইকেট হারিয়ে বসে নাইটরা। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই ডি’কককে (১) ফিরিয়ে দেন কামিন্স। পরের ওভারেই নারিনকে (৭) ফেরান মহম্মদ সামি। গত মুম্বই ম্যাচের মতো নাইট ব্যাটিঙে ধস নামার আশঙ্কা যখন ঘুরতে শুরু করেছিল ইডেনের গ্যালারিতে তখনই অঙ্গক্রিস রঘুবংশীকে নিয়ে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক রাহানে।
তৃতীয় উইকেটে দু’জনের ৮১ রানের পার্টনারশিপ নাইটদের ভিত শক্ত করে দেয়। ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান তোলে কেকেআর (Kolkata Knight Riders)। দুই ব্যাটসম্যানই যখন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে নাইটদের স্কোরবোর্ডকে সচল রাখছিলেন তখনই অযথা সানরাইজার্স স্পিনার জিসান আনসারীকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে কিপার হেনরিক ক্লাসেনের হাতে জমা পড়েন মারমুখী রাহানে।

২৭ বলে এক বাউন্ডারি ও চার ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৮ রান করে নাইট অধিনায়ক যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন তখন কেকেআরের রান ১১ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৭। এরপর নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করলেও বেশিক্ষণ আর উইকেটে থাকতে পারেনি রঘুবংশীও। ৩২ বলে ৫ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৫০ রান করে কামেন্দু মেন্ডিসের বলে হর্ষল প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তরুণ নাইট ব্যাটার। তবে তাতে নাইটদের রানের গতি কমেনি।
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ভেঙ্কি- রিঙ্কু ঝড় (Kolkata Knight Riders)
ইডেনের ২২ গজে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও রিঙ্কু সিং। দু’জনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের দৌলতে শেষ দশ ওভারে ১১৬ রান তুলল কেকেআর (Kolkata Knight Riders)। প্রথম তিন ম্যাচে ডাহা ব্যর্থ নাইটের সব থেকে মহার্ঘ্য ক্রিকেটার ভেঙ্কটেসের ফর্ম নিয়ে চরম সমালোচনা শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই সমস্ত সমালোচনার জবাব দিলেন নাইট ভাইস ক্যাপ্টেন। তাঁর এবং রিঙ্কুর ৪১ বলে ১০৩ রানের পার্টনারশিপের সুবাদে কুড়ি ওভারে ৬ উইকেটে ২০০ রান তুলল নাইটরা।

২৯ বলে ৭ বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে অনবদ্য ৬০ রানের ইনিংস খেললেন ভেঙ্কটেশ। হর্ষল প্যাটেলের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে অনিকেত বার্মার হাতে জমা পড়েন ভেঙ্কি। উল্টোদিকে, আইপিএলে নিজের পঞ্চাশতম ম্যাচে ১৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩২ রান করে অপরাজিতা থেকে যান রিঙ্কু। ইলিংসের শেষ বলে রান আউট হন রাসেল (১)।
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ২০০ রান নাইটদের (Kolkata Knight Riders)
২০১ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে নাইট পেস আক্রমণের মুখে শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সানরাইজার্সের তারকাখচিত ব্যাটিং লাইনআপ। ব্যাটারদের পর বোলারদের দুরন্ত পারফরমেন্সের ফলে ম্যাচ জিততে কোনও অসুবিধা হয়নি নাইটদের (Kolkata Knight Riders)। ৪৪ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে সানরাইজার্স। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বিধ্বংসী সানরাইজার্স ওপেনার ট্রাভিস হেডকে (৪) ফিরিয়ে দেন নাইট পেসার বৈভব অরোরা। পরের ওভারেই অপর ওপেনার অভিষেক শর্মাকে (২) ফিরিয়ে হায়দরাবাদ শিবিরে দ্বিতীয় ধাক্কাটি দেন আরেক নাইট পেসার হর্ষিত রানা।
তৃতীয় ওভারে ঈশান কিষানকে (২) ফিরিয়ে দেন বৈভব। মাত্র ৯ রানের মধ্যেই তিন উইকেট হারিয়ে রীতিমতো চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ। নাইট বোলাররা আরও চেপে ধরায় সেই চাপ কাটিয়ে ওঠা আর সম্ভব হয়নি সানরাইজার্সের। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে বড় পার্টনারশিপ করতে না পারায় গঙ্গা পাড়েই সূর্যাস্ত নিশ্চিত করে ফেলে প্যাট কামিন্সের দল। নীতিশ কুমার রেড্ডিকে (১৯) যখন রাসেল ফেরান তখন হায়দরাবাদের রান চার উইকেটে ৪৪। মাঝে কামেন্দু মেন্ডিস (২৭) এবং ক্লাসেন (৩৩) কিছুটা চেষ্টা করলেও দলের হার বাঁচাতে পারেননি। অধিনায়ক কামিন্স করেন ১৪ রান।

এদিন পেসারদের পাশাপাশি নাইট স্পিনাররাও সফল। ব্যাট হাতে সাফল্য না এলেও বল হাতে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে এক উইকেট নিলেন নারিন। তাঁর শিকার কামেন্দু। অপর স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী চার ওভারে ২২ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। তাঁর শিকার অনিকেত বর্মা (৬) , কামিন্স এবং সিমরজিৎ সিং (০)। চার ওভারে এক মেডেন সহ ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হলেন বৈভব অরোরা (Kolkata Knight Riders)। ১.৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিজের নামে করলেন রাসেল। নীতিশের পাশাপাশি হর্ষলকেও (৩) ফেরালেন রাসেল। একটি উইকেট পেলেন হর্ষিত। আর তাতেই ১৬.৪ ওভারে ১২০ রানেই শেষ হয়ে গেল সানরাইজার্সের ইনিংস। গতবার ফাইনালে হারের বদলা নেওয়া বৃহস্পতিবার ইডেনে অধরাই রয়ে গেল হায়দরাবাদের।