ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump Health) বারবার তার প্রাণশক্তি নিয়ে গর্ব করে আসছেন। একই সঙ্গে তার ৮২ বছর বয়সী পূর্বসূরি জো বাইডেনকে জরাজীর্ণ এবং মানসিকভাবে অযোগ্য বলে উপহাস করেছেন।
বয়স নিয়ে বিতর্কের মাঝেই ট্রাম্পের শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা (Donald Trump Health)
প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর প্রথম বার্ষিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা করালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump Health)। শুক্রবার সেই পরীক্ষার পর তিনি বলেন, “আমি খুব ভালো অবস্থায় আছি।” ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পের এই পরীক্ষার মাধ্যমে ফের উঠে এল হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য ও মানসিক সক্ষমতার প্রশ্ন।
ট্রাম্প (Donald Trump Health) অনেকদিন ধরেই নিজের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে গর্ব করেন এবং ৮২ বছর বয়সী তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে বারবার ঠাট্টা করে বলেছেন যে তিনি মানসিকভাবে অযোগ্য। কিন্তু এবার নিজেই এলেন আলোচনার কেন্দ্রে— কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হবে তাঁরও ৮২ বছর বয়সে।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয়েছে আমি খুব ভালো আছি। আমার হৃদয় ভালো। আমি একটা কগনিটিভ টেস্টও দিয়েছি। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছি।”
ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা (Donald Trump Health)
শুক্রবার সকালে ট্রাম্প (Donald Trump Health) ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে অবস্থিত ওয়াল্টার রিড সামরিক হাসপাতালে যান। যদিও এই যাওয়ার সময় কিছুটা দেরি হয় ট্যারিফ নিয়ে আলোচনার কারণে। সপ্তাহের শুরুতে নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে ট্রাম্প লিখেছিলেন, “আমি কখনও এত ভালো বোধ করিনি, তবুও এগুলো করা দরকার।”
ট্রাম্পের স্বাস্থ্য (Donald Trump Health) নিয়ে আগেও বারবার প্রশ্ন উঠেছে, কারণ তিনি অনেক তথ্য গোপন রাখেন বলে অভিযোগ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনি দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ প্রধান, তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিয়ে অনেকের আগ্রহ। তিনি জানান, হার্ট ও কগনিটিভ টেস্ট— দুইটিই করিয়েছেন। রিপোর্ট রোববার তাঁর চিকিৎসক প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: Obama Portrait replaced: নিঃশব্দ বদল! ওবামার জায়গায় ট্রাম্পের ছবি হোয়াইট হাউসে
হোয়াইট হাউস আগেই জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক শন বারবাবেলা শারীরিক পরীক্ষার বিস্তারিত জানাবেন। প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি প্রেসিডেন্ট খুব ভালো অবস্থায় আছেন, আপনারা প্রায় প্রতিদিনই সেটা দেখতে পান।” তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প কোনও অ্যানেস্থেশিয়া নেননি, যেটা সাধারণত কোলনোস্কোপি-র মতো প্রক্রিয়ায় ব্যবহার হয়। তবে তিনি বলেন, “এই পরীক্ষাগুলোর মধ্যেও অনেক পরিকল্পনা থাকে যাতে প্রেসিডেন্ট তাঁর সব লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন।”
ফাস্ট ফুড ভালোবাসেন, স্টেক খান খুব ভেজে— কিন্তু ট্রাম্প এখন আগের চেয়ে চৌখস
ট্রাম্প নিয়মিত গলফ খেলেন এবং মদ বা ধূমপান থেকে দূরে থাকেন। তবে তিনি ফাস্ট ফুড খেতে ভালোবাসেন এবং খুব ভেজে নেওয়া স্টেক পছন্দ করেন। যদিও আগের মেয়াদের তুলনায় এখন অনেকটা চেহারায় টান টান ভাব দেখা যাচ্ছে।
‘সবচেয়ে সুস্থ মানুষ’ দাবির বিতর্কিত ইতিহাস
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ও হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকেরা আগে বেশ কিছু অতিরঞ্জিত দাবি করেছেন তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে। ২০১৫ সালে তাঁর ডাক্তার হ্যারল্ড বোর্নস্টেইন বলেছিলেন, ট্রাম্প “অবশ্যই আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সুস্থ প্রেসিডেন্ট হবেন।” পরে তিনি CNN-কে জানান, ওই চিঠি ট্রাম্প নিজেই ডিকটেট করেছিলেন।
প্রথম মেয়াদে তাঁর হোয়াইট হাউস চিকিৎসক রনি জ্যাকসন ২০১৮ সালে বলেছিলেন, যদি ট্রাম্প একটু ভালো ডায়েট মেনে চলেন, তাহলে “২০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারেন।” সেই রিপোর্টে বলা হয়, ট্রাম্পের কোনও কগনিটিভ সমস্যা নেই, স্বাস্থ্য খুব ভালো। পরের বছর দেখা যায়, ট্রাম্পের ওজন ২৪৩ পাউন্ড (প্রায় ১১০ কেজি), যা তাঁকে টেকনিকালি ওবিস বা স্থূল করে তোলে। তখন তিনি উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ওষুধ খাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: Bill Recognise Hinduphobia: আমেরিকায় স্বীকৃতির পথে ‘হিন্দুফোবিয়া’! প্রথমবার আনুষ্ঠানিক বিল পেশ
২০২০ সালে ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, তিনি কগনিটিভ ইম্পেয়ারমেন্টের পরীক্ষায় “পারসন, ওম্যান, ম্যান, ক্যামেরা, টিভি” বলে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
২০২৪ নির্বাচনে ট্রাম্প-বাইডেনের বয়স বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়
২০২৪ সালের নির্বাচনে যখন ট্রাম্প ও বাইডেন মুখোমুখি হন, তখন তাঁরা ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। জুন মাসে একটি টিভি বিতর্কে বাইডেনের দুর্বল পারফরম্যান্স তাঁকে প্রার্থীপদ থেকে সরতে বাধ্য করে। তখন থেকেই কগনিটিভ স্বাস্থ্য বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প বারবার নিজের সক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস বারবার অভিযোগ করছে, আগের প্রশাসন বাইডেনের স্বাস্থ্য সমস্যা আড়াল করেছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে দেশবাসীর নজর এখন তীক্ষ্ণ।