ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্ব অর্থনীতিতে ফের নতুন করে উত্তেজনার আবহ। যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের শুল্ক যুদ্ধ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে(US China Tariff War)। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন চিনা পণ্যের উপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশে পৌঁছে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে এই বার্তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে— যদি চিন নিজেদের ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ প্রত্যাহার না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ‘আরও কড়া পথে’ হাঁটবে। এই পদক্ষেপ শুধু বাণিজ্যিক নয়—ভূরাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়েও ইঙ্গিতবাহী।
কার উপর কতটা চাপ? (US China Tariff War)
গত কয়েক মাস ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের খেলায় মেতে আছে বিশ্বের দুই সবচেয়ে বড় অর্থনীতি (US China Tariff War)। ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন চিনা পণ্যের উপর শুল্ক ১২৫ শতাংশে উন্নীত করে। ১০ এপ্রিল তা আরও বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হয়। ১২ এপ্রিল এর পাল্টা হিসেবে চিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে। ১৬ এপ্রিল ওয়াশিংটন জানায়, এবার শুল্ক ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই উত্তেজনা যে শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ নয়, তার ইঙ্গিত মিলছে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে। ব্লুমবার্গ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন সরকার তাদের দেশীয় বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে— যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থা বোয়িংয়ের কাছ থেকে নতুন বিমান না কেনার জন্য।
কোন কোন খাতে শুল্ক আরোপ? (US China Tariff War)
এই যুদ্ধের বলি হচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ খাত (US China Tariff War)। যেমন কোবাল্ট, লিথিয়াম, নিকেলের মতো বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে প্রয়োজনীয় ধাতু সহ বিরল ধাতু যেগুলি স্মার্টফোন, ব্যাটারি এবং সামরিক সরঞ্জামে ব্যবহৃত হয় এবং ইলেকট্রনিকস, বাণিজ্যিক বিমান, চিপস, মোবাইল যন্ত্রাংশের ক্ষেত্র গুলি সঙ্কটে পড়ছে। এই খাতগুলি এমনিতেই বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও চাহিদাসম্পন্ন। ফলে, এর প্রভাব মার্কিন ব্যবসা, প্রযুক্তি শিল্প এবং সরাসরি সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের উপরে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন (US China Tariff War)
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট স্পষ্ট করেছেন— “চিন শুধু মার্কিন বাজার দখলের চেষ্টাই করছে না, বরং জাতীয় নিরাপত্তাকেও চ্যালেঞ্জ করছে (US China Tariff War)। আমরা কোনও ভাবেই তাদের ‘অসদুপায়’ বরদাস্ত করব না।”বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন চিন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি খতিয়ে দেখার একটি নতুন তদন্ত প্রক্রিয়াও চালু করেছে। এর আওতায় রয়েছে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার, প্রযুক্তি যন্ত্র, এবং এমনকি সফটওয়্যার যন্ত্রাংশও।

আরও পড়ুন: Sheikh Hasina : নব্য আওয়ামী লীগ গঠনের চক্রান্ত! রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় বাংলাদেশে?
হার্ডলাইনে অনড় বেজিং (US China Tariff War)
চিন অবশ্য ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারিকে একপ্রকার রাজনৈতিক চাপ হিসেবে দেখছে। বেজিংয়ের মতে,
“যুক্তরাষ্ট্র বারবার অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে এবং মুক্ত বাজারনীতির বিরুদ্ধাচরণ করছে।”বিশ্লেষকদের মতে, চিন এখন ‘অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ’-এর পথে হাঁটছে, অর্থাৎ তারা চাইছে মার্কিন বাজারে নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও এশীয় বাজারকে গুরুত্ব দিতে।
অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ (US China Tariff War)
এই শুল্কযুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক শেয়ার বাজার ও বিনিয়োগ পরিবেশে (US China Tariff War)। প্রযুক্তিখাত ও EV (ইলেকট্রিক ভেহিকেল) স্টকগুলিতে দেখা দিয়েছে বড় পতন।সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে চিপস, ব্যাটারি ও কাঁচামাল উৎপাদনে।আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা WTO-এর পক্ষ থেকে ‘উদ্বেগ প্রকাশ’ করে দু’পক্ষকেই আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা এখন ‘নিরাপদ পুঁজি’ হিসেবে সোনা, মার্কিন ডলার ও ইউরোতে ঝুঁকছেন।
রাজনৈতিক কৌশল না বিপজ্জনক জুয়া? (US China Tariff War)
অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই ‘শুল্ক-আক্রমণ’ আসন্ন নির্বাচনের কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে (US China Tariff War)। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল— “চিনকে শিক্ষা দেওয়া”। ফলে এই কঠোর পদক্ষেপ একদিকে তাঁর জনভিত্তিকে সন্তুষ্ট করতে পারে, অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।অন্যদিকে, চিনও মার্কিন বাজারে গুরুত্বপূর্ণ রফতানিকারক হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানে। ফলে দুই পক্ষের কেউই সম্পূর্ণভাবে পিছিয়ে আসবে না।বাণিজ্যযুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, ততই ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গ্রাহক, এবং চাপ পড়বে বিশ্ব অর্থনীতির উপরে। এখন দেখার, এই দুই পরাশক্তির সংঘর্ষ কোথায় গিয়ে শেষ হয়— আলোচনার টেবিলে, নাকি আরও কঠোর ‘শুল্ক-প্রাচীর’-এর মধ্যে?