ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার উসকানিমূলক আচরণ পাকিস্তানের। ভারত-পাক সীমান্তে উত্তেজনা থাকলেও পাকিস্তানের ভিতরেই ছড়িয়ে পড়ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। বিস্ফোরণে কাঁপছে শহর। নিশানায় সেনাকর্মীরা। একের পর এক হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন পাক সেনা আধিকারিকেরা।
বালোচিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণ (Balochistan Blasts)
বুধবার বালোচিস্তানের দুই জায়গায় পাক সেনার উপর বড়সড় হামলা চালায় বালোচ বিদ্রোহীরা। প্রথম হামলা শোরকান্ড এলাকায়। সেনা কনভয়ে রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয় (Balochistan Blasts)। এই হামলায় নিহত হন অন্তত ১২ জন সেনা আধিকারিক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্পেশাল অপারেশন কমান্ডার তারিক ইমরান, সুবেদার উমর ফারুক-সহ আরও অনেকে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় সেনার গাড়ি।

এর কিছুক্ষণ পরই, দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে বালোচিস্তানের কুলাগ তিগরানে ঘটে আরও একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ। আবারও রিমোট কন্ট্রোল আইইডির মাধ্যমে চালানো হয় হামলা। নিশানায় ছিল বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই আধিকারিকের।
দায় স্বীকার বালোচ লিবারেশন আর্মির (Balochistan Blasts)
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। সংগঠনের মুখপাত্র জেয়নাদ বালোচ এক বিবৃতিতে জানান, “পাক সেনা এখন আর কোনও সম্মান ধরে রাখতে পারেনি। তারা হয়ে উঠেছে সশস্ত্র গুণ্ডাবাহিনী। বালোচদের জমি ও সম্পদ লুঠ করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই চলবেই। ভবিষ্যতে হামলার মাত্রা আরও বাড়বে।”
ট্রেন অপহরণ ও গণহত্যা (Balochistan Blasts)
মাত্র কয়েক মাস আগেই, মার্চ মাসে নজিরবিহীন হামলা চালায় বালোচ বিদ্রোহীরা। কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী যাত্রীবাহী জাফার এক্সপ্রেস ট্রেনটি অপহরণ করে তারা (Balochistan Blasts)। ট্রেনটিতে ছিলেন প্রায় ৫০০ জন যাত্রী, যার মধ্যে সেনা ও আইএসআই আধিকারিকরাও ছিলেন। বিদ্রোহীদের দাবি ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে, না হলে পণবন্দিদের খুন করা হবে।
আরও পড়ুন:Operation Sindoor: হামলায় প্রাণ হারালেন জইশের প্রতিষ্ঠাতা জঙ্গি মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন
যদিও সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সেনা অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় যাত্রীদের। তবে বালোচ লিবারেশন আর্মির দাবি, তারা অন্তত ৫০ জন সেনাকে হত্যা করেছে।
রক্তাক্ত বাস্তবতা (Balochistan Blasts)
বালোচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই এই অঞ্চল স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এসেছে। ২০০০ সালের পর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে BLA। তারা পাক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (CPEC) কারণে বালোচিস্তানের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে (Balochistan Blasts)। বিদ্রোহীরা অভিযোগ করেছে, এই প্রকল্পের আড়ালে তাদের সম্পদ লুট করছে পাক প্রশাসন, অথচ স্থানীয় মানুষ পাচ্ছে না কোনও সুযোগ-সুবিধা—উলটে চলছে গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও দমনপীড়ন।

দেশের অন্দরে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি? (Balochistan Blasts)
বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায়, পাকিস্তানের অন্দরে কার্যত গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে সীমান্তে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, অন্যদিকে দেশের অন্দরে নিজস্ব নাগরিকদের বিরুদ্ধেই রক্তক্ষয়ী লড়াই চালাতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। বালোচিস্তানের আগুন থামার কোনও সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। বরং এই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশজুড়ে। আন্তর্জাতিক মহলও পরিস্থিতির দিকে গভীর নজর রাখছে।