ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গত ২২ জুন রাত্রে মার্কিন সামরিক বাহিনী(U.S. Air Force) ‘Operation Midnight Hammer’ নামে একটি গোপন অভিযানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করেছে(B-2 Spirit Stealth Bomber)। এই মিশনের জন্য ব্যবহৃত হয় B‑2 Spirit স্টেলথ বোম্বার। গোপনভাবে মিশন সম্পাদনে এই বিমান গুলোতে GBU‑57 Massive Ordnance Penetrator বা MOP “বাঙ্কার-বাস্টার” বোমা ব্যবহার হয়।
এই B‑2 বিমানগুলো Whiteman Air Force Base, Missouri থেকে রওনা হয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা–পূর্ণ ফ্লাইটের পর তীব্র আক্রমণ চালায়। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা Isfahan, Fordow এবং Natanz-এ হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই আক্রমণকে “অত্যন্ত সফল” বলে অভিহিত করেন। ইরান দাবি করেছে, পারমাণবিক উপকরণ আগে থেকেই সরিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং Fordow মূলত ভূমিকম্প বা ‘ground-level damage’ পেয়েছে, সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী ক্ষমতা এই B‑2 Spirit স্টেলথ বোম্বারের?
ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান (B-2 Spirit Stealth Bomber)
বিশ্বের অন্যতম জটিল ও ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান হিসেবে স্বীকৃত B‑2 Spirit স্টেলথ বোম্বার যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর অহংকার(B-2 Spirit Stealth Bomber)। প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এই যুদ্ধবিমান প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও গোপন অভিযানে অবিশ্বাস্য সাফল্যের জন্য পরিচিত। ২০২৫ সালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ‘Operation Midnight Hammer’-এর সময় B‑2 Spirit এর ব্যবহার ফের প্রমাণ করল, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবস্থায় এটি এখনও শীর্ষে।
শত্রুর রাডারে ধরা না (B-2 Spirit Stealth Bomber)
B‑2 Spirit ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে, যাতে এটি শত্রুর রাডারে ধরা না পড়ে। এই ‘low observable’ প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বিমানটির ‘flying wing’ স্ট্রাকচার, বিশেষ ধরণের অবসার্বেন্ট ম্যাটেরিয়াল, এবং কম তাপ-উৎসারক ইঞ্জিন ডিজাইন একে প্রায় অদৃশ্য করে তোলে শত্রুপক্ষের রাডার ও তাপ-অনুসন্ধানকারী ব্যবস্থার কাছে।

আরও পড়ুন: Earthquake In Karachi : ভূমিকম্পে ফাটলো করাচি জেলের দেয়াল ! জেল থেকে পালালো দু-শোর বেশি বন্দি
ভয়ঙ্কর বোমা বহনক্ষমতা (B-2 Spirit Stealth Bomber)
B‑2 Spirit তার ওজন ও আকারের তুলনায় অবিশ্বাস্য পরিমাণ অস্ত্র বহনে সক্ষম। এটি প্রায় ৪০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত কনভেনশনাল বা পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে(B-2 Spirit Stealth Bomber)। এর মধ্যে রয়েছে GBU-57 “Massive Ordnance Penetrator” (MOP), যা গভীর ভূগর্ভস্থ বাংকার ধ্বংসে সক্ষম। পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রের “nuclear triad”-এর অন্যতম স্তম্ভ।
দীর্ঘ পাল্লার অভিযানে দক্ষ (B-2 Spirit Stealth Bomber)
এই বিমানটি একটানা প্রায় ১১,০০০ কিমি পর্যন্ত উড়তে পারে, এবং আকাশপথে জ্বালানি ভরার সুবিধার কারণে এটি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে পৌঁছতে পারে। যেমন ২০২৫ সালের জুনে আমেরিকার মিসৌরি ঘাঁটি থেকে ইরান পর্যন্ত ননস্টপ অপারেশন ছিল তার প্রমাণ।

অতীতের মিশনে সাফল্য (B-2 Spirit Stealth Bomber)
B‑2 Spirit প্রথম যুদ্ধমাঠে ব্যবহৃত হয় ১৯৯৯ সালে কোসোভো যুদ্ধের সময়(B-2 Spirit Stealth Bomber)। পরবর্তীকালে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় গোপন মিশনে একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে এমন স্থানে যেখানে প্রচলিত বিমান গেলে শত্রু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে পড়ত, সেখানে B‑2 কার্যত অদৃশ্য থেকে সফল হামলা চালাতে পেরেছে।
সীমাবদ্ধতা ও ব্যয় (B-2 Spirit Stealth Bomber)
বিমানটি যতই আধুনিক হোক, এর ব্যয় অত্যন্ত বেশি। শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণেই বছরে কয়েকশো মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। পুরো বিশ্বে মাত্র ২০টি B‑2 Spirit সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা হয়, যা এই বিমানকে আরও দুর্লভ ও বিশেষজ্ঞ-নির্ভর করে তোলে।

বিশাল ধ্বংস ঘটানোর ক্ষমতা (B-2 Spirit Stealth Bomber)
B‑2 Spirit স্টেলথ বোম্বার আধুনিক যুদ্ধের রণনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর চোখকে ফাঁকি দিয়ে, দূর থেকে নিশানা করে বিশাল ধ্বংস ঘটানোর ক্ষমতা একে যুগান্তকারী করে তুলেছে(B-2 Spirit Stealth Bomber)। যদিও এর ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তবুও বিশ্বরাজনীতির মোড় ঘোরাতে এই বিমান এখনো সবচেয়ে প্রভাবশালী অস্ত্রগুলোর একটি। বিশেষ করে পরমাণু স্থাপনায় বা গোপন সামরিক অভিযানে এর প্রভাব অস্বীকার করা অসম্ভব।