ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরে অবশেষে থেমেছে যুদ্ধের ঢেউ। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প(Iran Israel Conflict)। আপাতত শান্ত হলেও, থেমে থাকেনি বিজয়ের কৃতিত্ব দাবি করার লড়াই। ইরান, ইজরায়েল ও আমেরিকা— তিন পক্ষই নিজেদের জয়ী ঘোষণা করেছে। প্রতিটি পক্ষের বক্তব্যেই আছে কিছু নির্দিষ্ট যুক্তি। আবার সেগুলি ঘিরে রয়েছে পাল্টা বিতর্ক, আপত্তি ও অস্বীকৃতিও।
আমেরিকার ‘পরমাণু বিপদে’ ছেদ (Iran Israel Conflict)
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে তারা সফল(Iran Israel Conflict)। বি-২ বম্বার বিমানে ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সাময়িক অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও মার্কিন গোয়েন্দাদের গোপন রিপোর্ট বলছে, পরিকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, কেবলমাত্র প্রবেশপথ বন্ধ হয়েছে। ট্রাম্পের অবশ্য দাবি আরও জোরালো— “পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রম ধ্বংস এবং যুদ্ধ থামানো, দুটোই সফল ভাবে হয়েছে।”
এই অবস্থান থেকেই রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছেন ট্রাম্প (Donald J. Trump)। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীর ভাবমূর্তি গড়ছেন তিনি। তবে সমালোচকরা বলছেন, সামরিক হস্তক্ষেপ করেও কার্যত তেহরানের পরমাণু ছক আটকানো যায়নি।
এক যুদ্ধে দুই বার্তা তেল আভিভের (Iran Israel Conflict)
ইজরায়েলের দাবি, তারা “দুটি অস্তিত্বগত ঝুঁকি”— পরমাণু অস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র— নষ্ট করে দিয়েছে(Iran Israel Conflict)। নাতান্জ, ইসফাহান ও ফোরডোর মতো কৌশলগত কেন্দ্রগুলিতে হামলা চালিয়ে সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে তেল আভিভ। তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্তাদের হত্যাও এই অভিযানের অংশ।

আরও পড়ুন: Iran Israel Conflict : যুদ্ধবিরতির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মোসাদের গুপ্তচর সন্দেহে তিন জনকে ফাঁসি ইরানের
পাশাপাশি, গাজা ফ্রন্টে হামাসের বিরুদ্ধেও লড়ছে ইজরায়েল। এই জোড়া যুদ্ধ চালিয়ে প্রমাণ দিতে চায়, তারা একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে সমান দক্ষ। ইরানের আগ্রাসনের দোহাই দিয়ে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনাও কিছুটা স্তব্ধ করতে চেয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এখন দেখার, দেশের ভিতরে দুর্নীতি ও অপশাসনের অভিযোগে বিদ্ধ নেতানিয়াহু কি এই ‘যুদ্ধজয়’-এর ঢালেই আবার ভোট বৈতরণি পার করতে পারেন?
ইরানের আত্মরক্ষা না আক্রমণ? (Iran Israel Conflict)
সব কিছুর পরেও ইরান এখনও টিকে আছে। এবং সেটাই তাদের সবচেয়ে বড় বার্তা(Iran Israel Conflict)। তেহরানের দাবি, আমেরিকা ও ইজরায়েলের যৌথ চেষ্টার পরেও তাদের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি। গোপনে সরিয়ে রাখা ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হদিস পায়নি কেউ। কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ইরান বুঝিয়ে দেয়, শুধু পাল্টা নয়, প্রত্যাঘাতও দিতে পারে তারা।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, যুদ্ধে রক্ষণশীল প্রশাসনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইরানের জনসাধারণ। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় কট্টরতা নিয়ে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, ‘বাইরের শত্রু’র মোকাবিলায় তা স্তিমিত হয়েছে। ফলে আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের প্রশাসনের রাজনৈতিক ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা হলেও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কার জয়? (Iran Israel Conflict)
তিন পক্ষই ‘জয়’ দাবি করছে(Iran Israel Conflict)। তবে যুদ্ধের খরচ মেপে দেখলে, সেই জয় কতটা দীর্ঘস্থায়ী বা অর্থবহ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমেরিকা ব্যর্থ হয়েছে পরমাণু পরিকাঠামো ধ্বংসে। ইজরায়েল এখনও শত্রুদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর ইরান— যুদ্ধকালীন সংহতি পেলেও হারিয়েছে সেনা, বিজ্ঞানী ও নাগরিক প্রাণ। যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু উত্তেজনা নেই— তা বলা যাবে না। সংঘর্ষবিরতির পরেও ছায়াযুদ্ধ, গুপ্তচরবৃত্তি ও চাপান-উতোর চলতেই থাকবে। সত্যিকারের জয় কাদের, তা সময়ই বলবে।