ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের (Owaisi slams Bihar voter list clean-up) বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে তাড়াহুড়ো করে নাম মুছে ফেলার ফলে হাজার হাজার নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়া হতে পারে।
বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে বিতর্ক (Owaisi slams Bihar voter list clean-up)
অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েসি সোমবার বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার ‘Special Intensive Revision’ (SIR) বা বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন এই প্রক্রিয়ার সময় ও নির্বাচন কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে (Owaisi slams Bihar voter list clean-up)। নির্বাচন কমিশনের দফতরে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওয়েসি বলেন, “যদি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েন, তাহলে তারা নাগরিকত্বও হারাবেন। আমরা এই সংশোধনের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু সময় দেওয়া উচিত। যদি অবৈধ অভিবাসী থাকেই, তাহলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের ভোট দিতে দেওয়া হল কেন? তখন তারা কীভাবে ভোট দিলেন?”
‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ নিয়ে বিজেপি-আরএসএস-এর বিরুদ্ধে তোপ (Owaisi slams Bihar voter list clean-up)
ওয়েসি আরও বলেন, বিজেপি ও আরএসএস বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে (Owaisi slams Bihar voter list clean-up)। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে ভারত তাদের থাকতে দিয়েছিল। তাহলে এখন হঠাৎ করে তারা অনুপ্রবেশকারী হয়ে গেল কীভাবে?” তিনি সতর্ক করে দেন, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া শুধু ভোটাধিকার হারানো নয়, বরং গরিব মানুষের জীবিকাই বিপন্ন হবে। “যাদের নাম বাদ যাবে, তারা শুধু ভোটের সুযোগ হারাবেন না, বরং তাদের বেঁচে থাকার উপায়টাই চলে যাবে। অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বিহারে ফিরে এসেছেন, কিন্তু তাঁদের কাছে প্রমাণপত্র নেই।”
অভিযোগ, প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে শুরু হয়েছে প্রক্রিয়া (Owaisi slams Bihar voter list clean-up)
ওয়েসি জানান, এই ‘ক্লিন-আপ’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাড়াহুড়ো করে (Owaisi slams Bihar voter list clean-up)। তিনি বলেন, “আমরা কমিশনকে বলেছি যে এই সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) পর্যন্ত সঠিক গাইডলাইন বা হ্যান্ডবুক দেওয়া হয়নি।” আইনি পথে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তিনি এখনই কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। ওয়েসি বলেন, “আমরা আদালতে যাব কি না, তা সময় বলবে। আমরা অন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করব।”
সংখ্যালঘুদের অধিকারের ইস্যুতে কেন্দ্রকে আক্রমণ
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর মন্তব্যেরও কড়া বিরোধিতা করেছেন ওয়েসি। রিজিজু বলেছিলেন, ভারতের সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের থেকে বেশি সুবিধা পান। জবাবে ওয়েসি X-এ লিখেছেন, “আপনি ভারতের একজন মন্ত্রী, কোনও রাজা নন @KirenRijiju। আপনি সংবিধানিক পদে আছেন, সিংহাসনে নয়। সংখ্যালঘুদের অধিকার কোনও দান নয়, এটা মৌলিক অধিকার।”
আরও পড়ুন: Manipur Unrest : মণিপুরে ফের জঙ্গিবিরোধী অভিযান, গ্রেফতার ৮ কট্টরপন্থী জঙ্গি!
তিনি প্রশ্ন করেন, “প্রতিদিন পাকিস্তানি, বাংলাদেশি, জিহাদি বা রোহিঙ্গা বলে গালাগালি পাওয়াটাই কী সুবিধা? লিনচিং হওয়াটাই কী সুরক্ষা? ভারতীয় নাগরিকদের অপহরণ করে বাংলাদেশে পাঠানোটাই কী রক্ষা?”
মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ বন্ধের বিরোধিতা
ওয়েসি কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, তারা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে। “আপনারা মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করেছেন। প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ বন্ধ করেছেন। পোস্ট-ম্যাট্রিক ও মেরিট-কাম-মিন্স স্কিমও কমিয়েছেন। কারণ এগুলো মুসলিম ছাত্রদের উপকার করত।”
রাজ্য সভাপতি আখতারুল ইমানের আশঙ্কা
AIMIM-এর বিহার রাজ্য সভাপতি ও বিধায়ক আখতারুল ইমান একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দরিদ্র, পরিযায়ী শ্রমিক ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষের কাছে কোনও পরিচয়পত্র নেই। তাই তাদের ভোটাধিকার হারানোর আশঙ্কা প্রবল। তিনি কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যে এই প্রক্রিয়ার সময়সীমা বাড়ানো হোক বা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হোক। তিনি বলেন, “বিহারে মাত্র ২ শতাংশ মানুষের পাসপোর্ট আছে, আর ১৪ শতাংশ মানুষ স্নাতক। বেশিরভাগ গরিব মানুষের কাছে কোনও নথিই নেই। অনেকে বন্যায় তাদের কাগজপত্র হারিয়েছেন। ফলে তারা ভোটাধিকার হারানোর ভয়ে আছেন।”
আরও পড়ুন: Tennis Academy: নিজস্ব টেনিস অ্যাকাডেমিই ছিল না রাধিকার! মায়ের নীরবতায় রহস্য বাড়ছে
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান
২০২৫ সালের ২৪ জুন, নির্বাচন কমিশন এই বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের নির্দেশ দেয়। ২০০৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাপের সংশোধনী হচ্ছে। কমিশন বলেছে, এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হল মৃত ব্যক্তিদের নাম, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম মুছে ফেলে শুধুমাত্র প্রকৃত নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করা। শহরায়ণ, অভিবাসন ও মৃত্যুর খবর না থাকা এই অভিযানের কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে কমিশন। তবে ওয়েসি নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি বলেন, “আমাদের শুধু একটাই প্রশ্ন — এত বড় কাজ এত কম সময়ে কীভাবে করা সম্ভব? এর পরিণতি সাধারণ মানুষকেই ভোগ করতে হবে।”