Last Updated on [modified_date_only] by Aditi Singha
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : সপ্তাহের শুরুতেই ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ল আফগানিস্তান (Afghanistan Earthquake)। সোমবার ভারতীয় সময় রাত ০০:৪৭ মিনিটে হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চলে আঘাত হানে প্রবল ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ধরা পড়েছে ৬.৩, যা ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট। ভূমিকম্পের অভিঘাতে কেঁপে ওঠে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা, পাশাপাশি উত্তর ভারতের দিল্লি-এনসিআর, জম্মু-কাশ্মীর ও আশেপাশের রাজ্যগুলোতেও প্রবল কম্পন অনুভূত হয়। আতঙ্কে বহু মানুষ রাতের অন্ধকারে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

কম্পনের কেন্দ্রস্থল ও মাত্রা (Afghanistan Earthquake)
জাতীয় ভূমিকম্পবিদ্যা কেন্দ্র (NCS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল ৩৪.৫০° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭০.৮১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার গভীরে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) সতর্ক করে বলেছে, প্রাণহানির সংখ্যা কয়েকশ’তে পৌঁছাতে পারে। আফগানিস্তান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।

ভূমিকম্পপ্রবণ আফগানিস্তান (Afghanistan Earthquake)
ভৌগোলিকভাবে আফগানিস্তান ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটি ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে অবস্থিত, ফলে প্রায়ই সেখানে বড়ো কম্পন আঘাত হানে। ২০২২ সালে পূর্ব আফগানিস্তানে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত এক হাজার মানুষ, আহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার। গত দুই দশকের মধ্যে সেটিই ছিল ভয়াবহতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এবারের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হয়তো সেই ঘটনার থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পারে।

দুর্বল ঘরবাড়ি ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা (Afghanistan Earthquake)
আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়ি বেশিরভাগই কাঠ, কাঁচা ইট বা নিম্নমানের কংক্রিট দিয়ে তৈরি। এইসব ঘর ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নয়। ফলে কম্পন শুরু হতেই ভেঙে পড়েছে অসংখ্য বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে গিয়েছেন বহু মানুষ। ঠিক কতজন মারা গেছেন বা আহত হয়েছেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে—গ্রামেগঞ্জে রাস্তা ফেটে গেছে, ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, বহু পরিবার নিখোঁজ।

উদ্ধার অভিযানে বিপত্তি (Afghanistan Earthquake)
তালিবান প্রশাসন ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, ভাঙাচোরা রাস্তা এবং পরিকাঠামোর অভাবে কাজ এগোচ্ছে ধীর গতিতে। সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছে হেলিকপ্টার, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিটি ঘণ্টাই এখন গুরুত্বপূর্ণ—দ্রুত উদ্ধারকাজ না হলে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
মানবিক সংকটের আশঙ্কা
ভূমিকম্পের ধাক্কায় শুধু প্রাণহানিই নয়, সামনে আরও বড়ো মানবিক সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন, খাদ্য, বিশুদ্ধ জল এবং চিকিৎসার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা বিশেষভাবে করুণ। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রতিবেশী দেশগুলিকে ত্রাণ-সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন : RSS Mohan Bhagwat : কেন আরএসএস চাইছে না ভারতের অবস্থা জাপানের মত হোক?
বিশ্বের দৃষ্টি এখন আফগানিস্তানের দিকে
প্রকৃতির এই ভয়াল রূপ আবারও প্রমাণ করল—ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সামনে মানুষ কতটা অসহায়। আফগানিস্তানের জনগণ এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্ববাসীর নজরও এখন সেই দুর্গত দেশের দিকে—সাহায্য আসবে তো? নাকি আবারও ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ ট্র্যাজেডির সাক্ষী হবে গোটা পৃথিবী?