ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ফরাসি ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব সঙ্কটে সংসদ। আইন প্রণেতারা বুধবার বাম এবং অতি-ডান উভয়ের দ্বারা প্রস্তাবিত একটি অনাস্থা প্রস্তাবের (No Confidence in France) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার-এর নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভোট দিয়েছেন। এর ফলে বার্নিয়ার হলেন ফ্রান্সের সবথেকে কম সময়ের মেয়াদে থাকা প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাত্র তিন মাস প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তার সরকার গত ৬০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হল।
পিছনে থাকা সমস্যা (No Confidence in France)
সরকার পড়ে (No Confidence in France) যাওয়ার ফলে আসলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে এবং দেশের উপরে ঝুলতে থাকা অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরাজয় রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে একটি ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিনত করেছে। তার স্ন্যাপ নির্বাচনের আহ্বান এই সংকটের সূচনা করেছে।
এর আগের অনাস্থা (No Confidence in France)
শেষবার একটি অনাস্থা (No Confidence in France) সফল হয়েছিল ১৯৬২ সালে জর্জেস পম্পিডোর বিরুদ্ধে। সেই সময়ে শার্ল দে গল রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ফ্রান্স এখন আপাতত সরকার ছাড়াই চলছে। এর অর্থ হল গভীরভাবে মেরুকৃত জাতীয় পরিষদের কারনে তার বাজেট সঙ্কট কমাতে আইন পাস করার ক্ষমতা গভীরভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
কেন বার্নিয়ারকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল?
পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার হাত থেকে অতি-ডান দলকে আটকানোর জন্য ম্যাক্রোঁর স্ন্যাপ নির্বাচনের পরে কনো দল গরিষ্ঠতা পায়নি। এরপরেই বার্নিয়ারকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছিল। জনপ্রিয় না হলেও, বার্নিয়ারকে এই পদের জন্য একজন যোগ্য পছন্দ হিসাবে দেখা হয়েছিল এবং ভক্সের মতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি যথেষ্ট অনুমোদন পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: UK on Bangladesh Issue: বাংলাদেশ থাকা নাগরিকদের জন্য এই বিশেষ সতর্কবার্তা জারি ব্রিটেনের
চ্যালেঞ্জের মুখে
যাইহোক, সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া শাসন করার চেষ্টায় তিনি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তিনি সম্প্রতি সংসদের নিম্নকক্ষে একটি ভোট ছাড়াই ২০২৫ সালের জাতীয় বাজেট একটি রাষ্ট্রপতির ডিক্রির মাধ্যমে চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। এর ফলে তাকে বাম এবং অতি-ডান উভয় পক্ষের আইন প্রণেতাদের রোষাণলে পরতে হয়েছিল।
অতি ডানদের বাজেট নিয়ে দাবি
মেরিন লে পেনের অতি-ডান দল ন্যাশনাল র্যালি এই বাজেটকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে গণ্য করেছে। বাজেটে ৪৯ বিলিয়ন পাউন্ডের ডেফিসিট রিডাকশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাম এবং ডানপন্থী উভয় দলই ৫৭৭-সদস্যের জাতীয় পরিষদে বার্নিয়ারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছে। ২৮৮ ভোট দরকার ছিল প্রস্তাব পাশ হওয়ার জন্য। ৩৩১ জন ডেপুটি বার্নিয়ারের বিপক্ষে ভোট দেয়।
এরপর কী হবে?
অনাস্থা ভোটের পর বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে বার্নিয়ার তার সরকারের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তিনি ভোটের আগে বলেন, “আমি তিন মাস ধরে – এবং এখনও – ফরাসি জনগণের, সমস্ত ফরাসি জনগণের প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে একটি সম্মান বলে মনে করি। এবং একটি মুহুর্তে যখন এই মিশনটি শেষ হবে, সম্ভবত শীঘ্রই, আমি আপনাকে বলতে চাই যে ফ্রান্স এবং ফরাসিদের মর্যাদার সঙ্গে সার্ভ করা আমার জন্য সম্মানের বিষয় হয়ে থাকবে।”
বাড়বে বাজেট সংকট
বার্নিয়ারের ক্ষমতাচ্যুতি ফ্রান্সের চলমান বাজেট সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এটি ফরাসি রাজনীতিতে গভীর মেরুকরণের একটি সম্পূর্ণ প্রতিফলন। ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি তার আউটপুটের ৬.১ শতাংশ। পাশাপাশি এর মাথায় ৩.২ ট্রিলিয়ন ইউরো ঋণ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে COVID-19 মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহ বেশ কয়েকটি সংকটের কারণে এই সংকট।
নতুন নিয়োগ
যাইহোক, বার্নিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে থাকবেন কারণ ম্যাক্রোঁকে উপযুক্ত প্রধানমন্ত্রী খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এই কাজ মেরুকৃত জাতীয় পরিষদের কারণে কঠিন হবে। ম্যাক্রোঁ উত্তরসূরির নাম না দেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনও নতুন আইন পাস করা যাবে না।
আরও পড়ুন: Peacekeepers Bangladesh: বাংলাদেশে পাঠানো হোক শান্তিবাহিনী, মমতার মন্তব্যে চাপে ইউনূস সরকার
হবে না নতুন ভোট
ম্যাক্রোঁ ফের আইনসভার নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পারেন না কারণ তিনি ইতিমধ্যে জুন মাসে এটি করেছিলেন এবং ফরাসি আইন অনুসারে, জাতীয় পরিষদকে অবশ্যই কমপক্ষে এক বছরের জন্য বহাল থাকতে হবে নির্বাচনের আগে। এর ফলে শুধুমাত্র সরকারের বাজেট পাস করার জন্য এবং অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজে বের করার বিষয়ে ম্যাক্রোঁর উপর চাপ বাড়বে।
সামনেই মেগা ইভেন্ট
২০১৯ সালের অগ্নিকাণ্ডের পরে নর্ট-ডেম ক্যাথেড্রাল পুনরায় খোলার জন্য একটি মেগা ইভেন্টের আয়োজন করার কথা রয়েছে ম্যাক্রোঁর। যেখানে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন। অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির মধ্যেই একটি স্থিতিশীল সরকার বা বাজেট ছাড়াই ফ্রান্স এই বছর শেষ হওয়ার ঝুঁকির সামনে রয়েছে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও দুর্বল করবে যা ইতিমধ্যেই জার্মানির কোয়ালিশন সরকারের পরাজয়ের কারনে সমস্যায় রয়েছে।