ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বাংলায় ‘আলুর দমের মেলা’ (Alur Dom Mela)। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও মেলার মূল আকর্ষণ আলুরদম-মুড়ি ও কাঁকড়া। এই মেলা বিক্রি জিনিস মনে করিয়ে দেবে ১-২ দশক আগের হারিয়ে যাওয়া ছেলে বেলা। আমাদের এই বাংলায়, নতুন চাল উঠলে যেমন হয় নবান্ন উৎসব ঠিক তেমনই পৌষ মাসে নতুন আলু উঠলে, সেই আলু দিয়েই বাংলার এক গ্রামে হয় আলুর দমের মেলা। এই মেলার জন্য গ্রামবাসীরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন।
কোথায় হয় এই মেলা? (Alur Dom Mela)
যে মেলা দেখতে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এ মেলায় জিভে জল আনা আলুর দমের স্বাদ পান ঘুরতে আসা লোকজন। এ মেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না এলাকার লোকজন। তবে জানান, বেশ কয়েক দশক ধরেই মকর সংক্রান্তিতে এই মেলা বসে।
আরও পড়ুন: Gangasagar: ঝাড়ু হাতে সাগরতটে রাজ্যের মন্ত্রীরা, শুরু গঙ্গাসাগর সাফাই অভিযান
আলুর দমকে ঘিরেই গোটা একটা মেলা (Alur Dom Mela)। এই মেলা নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে আনন্দ উদ্দীপনা থাকে প্রবল। তাই পৌষ সংক্রান্তির রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় তোরজোর। ১ লা মাঘের কনকনে ঠান্ডায় ভোর থেকে বড় বড় ধামা করে মুড়ি এবং নতুন আলু নিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। কেউ আলুর দম বাড়ি থেকেই তৈরি করে নিয়ে আসেন। আবার কেউ বা কাট কুঠো দিয়ে উনুন জ্বালিয়ে কিংবা স্টোভ জ্বালিয়ে আলুর দম রাঁধেন। বড় বড় হাঁড়িতে করে ফুটতে দেখা যায় আলুর ঝোল। মেলায় গেলে চারিদিকে একটাই দৃশ্য। শীতের সকালে জল-খাবারে অজস্র মানুষের পাতে ধোঁয়া ওঠা আলুর দম সহযোগে মুড়ি। এখানে আলুর দম বিক্রি হয় ওজন দরে। প্রতি কেজিতে ৪০-৬০ টাকা।

আরও পড়ুন: Hooghly Fish Fair: অব্যাহত ৫১৮ বছরের ঐতিহ্য, জমজমাট মাছের মেলা
কাঁকড়া মেলা
এই মেলার আরো একটি বিশেষ নাম আছে, কাঁকড়া মেলা। বিক্রেতারা বেশিরভাগই আসেন সুন্দরবন এবং বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা থেকে। হাওড়া জেলার সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এই মেলা প্রতিবছর পহেলা মাঘ অনুষ্ঠিত হয় এবং একদিনই চলে এই মেলা। উদয়নারায়ণপুরের সিংটি গ্রামের খাঁ পাড়ায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই মেলা চলে আসছে। যা, হাওড়া জেলার সবচেয়ে বড় মেলা (Alur Dom Mela)। যেই মেলায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মেলবন্ধন হয়।
এমনকী এই মেলায় যে সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি হয় তাতেও রয়েছে অভিনবত্ব। মূলত কৃষকদের কাজে লাগে এই সব জিনিসই বিক্রি করা হয় মেলায়। বসে নানা ধরনের দোকান। কোথাও বিক্রি হয় বেতের বোনা ধামাখুলের দোকান, তো কোথাও বাঁশের তৈরি ঝুড়ির দোকান, তো কোথাও কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির দোকান। রাজবলহাট ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়দেব শীল বলছেন, “এটা আসলে পীরের মেলা (Alur Dom Mela)। শুরুতে সংখ্যালঘুরা এই মেলায় যোগ দিলেও, পরে হিন্দু ধর্মের লোকেরাও এতে মিলে যায়। কিন্তু, এখানের সব থেকে বড় আকর্ষণ আলুর দম। সব মানুষই এখানে আসে আলুর দম নিয়ে। সবাই মিলে একসঙ্গে বসে চলে খাওয়া-দাওয়া।”