ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ডেকলান রাইসের ফ্রি-কিক মাস্টারক্লাসে গানার্সরা সেমিফাইনালে পৌঁছানোর শেষ পর্যায়ে চলে গেছে (arsenal vs real madrid)। আর্সেনাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৩-০ গোলে অসাধারণ জয় পেয়েছে।
রাইসের জাদুতে এলোমেলো রিয়াল (arsenal vs real madrid)
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিল আর্সেনাল (arsenal vs real madrid)। এমিরেটস স্টেডিয়ামে খেলা এই ম্যাচে আর্সেনালের জয় এনে দিলেন মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইস, যিনি দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক দুটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিক নিয়ে ম্যাচের রং বদলে দিলেন। এরপর মিকেল মেরিনো দলের তৃতীয় গোলটি করেন। ম্যাচের শেষ দিকে বল ফেলে রেফারির নির্দেশ অমান্য করার জন্য রিয়ালের এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়।
রাইসের এমন দুটো গোলকে শুধু ‘ভালো’ বললে কম বলা হবে। সাধারণত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করা থিবো কুর্তোয়া পর্যন্ত ওই দুই গোলের ধারেকাছেও যেতে পারেননি। আশ্চর্যের ব্যাপার, এর আগে রাইস কোনও ফ্রি-কিকে গোল করেননি। এই ম্যাচেই প্রথম গোলটি করলেন এবং তাও এমন কায়দায় যা রীতিমতো চমকে দিয়েছে ফুটবল দুনিয়াকে।
ম্যাচ জেতার যোগ্য দল ছিল আর্সেনাল (arsenal vs real madrid)
চোটগ্রস্ত রিয়াল মাদ্রিদকে যেভাবে ম্যাচজুড়ে চাপে রেখেছে আর্সেনাল, তা একেবারেই পরিণত মানসিকতার পরিচয় (arsenal vs real madrid)। এই জয়ে তারা এখন একেবারে সেমিফাইনালের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। আগামী ১৬ এপ্রিল বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগে খেলতে যাবে তারা। সেই ম্যাচে স্পষ্ট ফেভারিট হিসেবেই নামবে মিকেল আর্তেতার দল। বুধবার পিএসজি ও অ্যাস্টন ভিলার মধ্যে ম্যাচের বিজয়ীর মুখোমুখি হবে তারা সেমিফাইনালে।
আরও পড়ুন: PBKS vs CSK: রানের বন্যা! পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে হেরে বিপর্যস্ত চেন্নাই শিবির
২০০৯ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠেনি আর্সেনাল। এবার সেই সুযোগ একেবারে হাতের নাগালে (arsenal vs real madrid)। আর্তেতা আগেই বলেছিলেন, রিয়ালের বিরুদ্ধে এই ম্যাচটাই তাঁর কোচিং কেরিয়ারের ‘সবচেয়ে বড় রাত’ হতে চলেছে। এবং তাঁর দলের খেলোয়াড়রা যেন ইতিহাস গড়ে আর্সেনালের হয়ে প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতার পথ তৈরি করে।
লিগে পিছিয়ে, ইউরোপে আশা বাঁচিয়ে রাখল গানাররা
প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের থেকে ১১ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে আর্সেনাল। টানা তৃতীয়বার রানার্স আপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু ইউরোপের মঞ্চে এই জয় বড় ট্রফির আশা জিইয়ে রাখল। গত মরসুমে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে কোয়ার্টারে হারতে হয়েছিল। ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠেও বার্সেলোনার কাছে হেরে যায় তারা। সেই সফরে শেষ ষোলোয় হারিয়েছিল রিয়ালকেই।
মাদ্রিদের জন্য লজ্জার রাত
১৫ বারের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এটি ছিল লজ্জার রাত। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এবার তারা দশবার হেরেছে, লা লিগায় বার্সার থেকে পিছিয়ে ৪ পয়েন্টে। এবার আর্সেনালের সামনে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করল তারা।
জুড বেলিংহ্যাম ছিলেন একেবারেই অচেনা। কিলিয়ান এমবাপে আর ভিনিসিয়াস জুনিয়রও বড়সড় কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি। এমবাপে একবার ডেভিড রায়ার হাতে শট মারেন, আর একবার বাইরে মারেন ভিনিসিয়াস।
গোলবন্যার সূচনা রাইসের থেকে
জুরিয়েন টিম্বারের ক্রসে রাইসের একটা হেড থিবো কুর্তোয়া সেভ করলেও, পরের বার আর পারেননি। ৫৮ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে নিখুঁত ফ্রি-কিকে রিয়ালের ডিফেন্স ও গোলকিপারকে অতিক্রম করে বল জালে পাঠান রাইস। স্ট্যান্ডে বসে থাকা রবার্তো কার্লোসও সম্ভবত এমন শটে গর্বিত হতেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই মার্টিনেলির শট কুর্তোয়া ঠেকান, মেরিনোর শট আলাবা লাইনের কাছ থেকে ক্লিয়ার করেন, আবার মেরিনোর শট আটকান কুর্তোয়া। এরপর ৭০ মিনিটে রাইস আরেকটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে আবার গোল করেন—এইবার ২০ গজ দূর থেকে।
এমিরেটসে তখন গর্জে উঠেছে গানার সমর্থকরা—“ডেক্লান রাইস, আমরা ওকে এনেছি,” ১০৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেও যেন মনে হচ্ছে, একদম সঠিক সিদ্ধান্ত।
আর্সেনালের স্বপ্নের রাত সম্পূর্ণ করলেন মেরিনো
মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই তৃতীয় গোলটি করেন মেরিনো। বক্সের ভিতর থেকে ১২ গজ দূর থেকে জোরালো শটে বল জালে পাঠান তিনি। এমিরেটস স্টেডিয়াম তখন আনন্দে উন্মাদ—লাল রঙের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে গোটা গ্যালারি।
এই জয় শুধু একটি ম্যাচ নয়, ইতিহাসের পাতায় আর্সেনালের জন্য স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি রাত। এখন দেখার, বার্নাব্যুতে তারা সেই ইতিহাসকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে।