ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ঢাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানালো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Bangladesh-Pakistan Relation)। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে উঠে এলেও এবার অন্তর্বর্তী প্রশাসন এটি আবার জোরালোভাবে উপস্থাপন করলো। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশসচিব মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে বিদেশসচিব আমনা বালোচ অংশ নেন।
ক্ষমা প্রার্থনার দাবি (Bangladesh-Pakistan Relation)
বৈঠকে মূলত তিনটি ঐতিহাসিক ও স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা হয় (Bangladesh-Pakistan Relation)। প্রথমত, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিচালিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের বিষয়। এবং তৃতীয়ত, ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদেশি অনুদানের অর্থ হস্তান্তর সংক্রান্ত দাবি।
পরিকল্পিত জাতিগত নিধন (Bangladesh-Pakistan Relation)
বাংলাদেশের পক্ষ (Muhammad Yunus) থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয় যে, ১৯৭১ সালের গণহত্যা কেবল একটি মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং তা ছিল পরিকল্পিত জাতিগত নিধন (Bangladesh-Pakistan Relation)। লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়, অসংখ্য নারী নির্যাতনের শিকার হন, এবং কোটি কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। এই ঘটনাকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা শুধু ইতিহাসের ন্যায্যতা রক্ষা নয়, এটি আঞ্চলিক শান্তি ও সৌহার্দ্যের দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক (Bangladesh-Pakistan Relation)
প্রসঙ্গত, এই বৈঠকটি প্রায় ১৫ বছর পর দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা (Bangladesh-Pakistan Relation)। এমন এক সময়ে এই আলোচনা হলো, যখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলেছে। ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তান থেকে শস্য আমদানির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক যোগাযোগ আবারও সচল হয়েছে।

আরও পড়ুন : Donald Trump on Pakistan : ইরানের পর এবার পাকিস্তান? ট্রাম্পের মন্তব্য ঘিরে তুঙ্গে উত্তেজনা
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব (Bangladesh-Pakistan Relation)
তবে এই আলোচনার আবহে ১৯৭১ সালের গণহত্যার প্রসঙ্গ আবারও সামনে চলে আসায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। সেই সফরের সময় এই বিষয়গুলো আরও উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অমীমাংসিত অধ্যায় (Bangladesh-Pakistan Relation)
বাংলাদেশের জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তবে পাকিস্তান কীভাবে এই দাবির প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (Bangladesh-Pakistan Relation)। কারণ, ইতিহাসের এই অমীমাংসিত অধ্যায় সুরাহা না হলে দুই দেশের মধ্যে সত্যিকারের আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন।এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের দাবি শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং একটি ন্যায়বিচারের প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক মহলেরও উচিত এই বিষয়টিতে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া এবং একটি টেকসই সমাধানের পথ উন্মুক্ত করা।