ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: হিন্দু-বিদ্বেষের ঘটনা বৃদ্ধির মধ্যেই জর্জিয়া প্রথম মার্কিন রাজ্য হিসেবে হিন্দুফোবিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি বিল পেশ করেছে (Bill Recognise Hinduphobia)। যদি এটি পাস হয়, তাহলে এটি জর্জিয়ার দণ্ডবিধি আপডেট করবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে বৈষম্য তালিকাভুক্ত করার এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হিন্দুফোবিয়া বিবেচনা করার সুযোগ দেবে।
হিন্দুধর্ম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের উদ্যোগ (Bill Recognise Hinduphobia)
আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্য প্রথমবারের মতো এমন একটি বিল পেশ করেছে, যা ‘হিন্দুফোবিয়া’ ও হিন্দু-বিরোধী বৈষম্যকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে (Bill Recognise Hinduphobia)। যদি এই বিল আইনে পরিণত হয়, তাহলে রাজ্যের দণ্ডবিধিতে সংশোধনী এনে হিন্দুধর্মের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এই বিল এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমেরিকায় হিন্দু-বিদ্বেষ বেড়ে চলেছে বলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইনপ্রণেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
দলমত নির্বিশেষে সমর্থন পেয়েছে বিলটি (Bill Recognise Hinduphobia)
৪ এপ্রিল, ‘এসবি ৩৭৫’ (SB 375) নামের এই বিলটি জর্জিয়া জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে পেশ করা হয় (Bill Recognise Hinduphobia)। এর প্রস্তাবকরা হলেন রিপাবলিকান সেনেটর শন স্টিল ও ক্লিন্ট ডিক্সন এবং ডেমোক্র্যাট সেনেটর জেসন এসটেভস ও ইমানুয়েল জোন্স। বিলটি পেশ করে সেনেটর শন স্টিল বলেন, “গত কয়েক বছরে গোটা দেশে হিন্দুদের ওপর ঘৃণামূলক অপরাধ স্পষ্টভাবে বেড়েছে।”
এই বিলের মাধ্যমে জর্জিয়া রাজ্যের আইন কোডে (Bill Recognise Hinduphobia) একটি নতুন ধারা যোগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে ‘হিন্দুফোবিয়া’কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এইভাবে— “হিন্দুধর্মের প্রতি শত্রুতামূলক, ধ্বংসাত্মক ও অবমাননাকর মনোভাব ও আচরণ।”
আরও পড়ুন: Pakistan Earthquake : আচমকা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাকিস্তান, জম্মু ও কাশ্মীর! রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫.৩
এই আইনের আওতায় রাজ্য ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে হিন্দুফোবিয়াকে বৈষম্যমূলক ঘটনার তদন্তে গুরুত্ব দিতে বলা হবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে জর্জিয়ার আইনপ্রণেতারা
উত্তর আমেরিকার হিন্দুদের একটি অ্যাডভোকেসি সংগঠন কোয়ালিশন অব হিন্দুস অব নর্থ আমেরিকা (CoHNA) জানিয়েছে, “এই গুরুত্বপূর্ণ বিলটির জন্য আমরা সেনেটর শন স্টিল, ইমানুয়েল ডি. জোন্স, জেসন এসটেভস ও ক্লিন্ট ডিক্সনের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা জর্জিয়া ও আমেরিকায় হিন্দুদের অধিকার ও সুরক্ষার প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন।” সংগঠনটি আরও জানায়, বিল এসবি ৩৭৫ “২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে আমাদের শুরু করা এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।”
এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হিন্দুধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম ধর্মগুলোর একটি। এটি ১০০টিরও বেশি দেশে ১.২ বিলিয়ন অনুসারী নিয়ে একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ধর্মীয় ঐতিহ্য, যা সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তির বার্তা দেয়।
আমেরিকায় হিন্দুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য
পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর ২০২৩–২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকার জনসংখ্যার প্রায় ০.৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ হিন্দু। শুধুমাত্র জর্জিয়া রাজ্যেই হিন্দুর সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি, যাঁদের বেশিরভাগই থাকেন আটলান্টা ও আশেপাশের অঞ্চলে। জর্জিয়ার হিন্দুদের অনেকেই গুজরাট থেকে এসেছেন।
হিন্দুফোবিয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
বিভিন্ন ভারতীয়-আমেরিকান নেতারা বারবার হিন্দুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা ঘৃণামূলক মনোভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন। ‘গবিষ্টি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা জানিয়েছে, তাদের হিন্দুফোবিয়া ট্র্যাকার অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ১,৩১৪টি ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিন্দুদের বিরুদ্ধে হয়েছে।
২০২৪ সালের এক সম্মেলনে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান শ্রী থানেদার বলেন, “আমরা প্রচুর হিন্দুফোবিয়া দেখছি,” এবং এই ঘৃণা-অপরাধ রুখতে কার্যকর পথ খোঁজার আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ছে বৈষম্য
সেই বৈঠকে ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিনিধি সুহাগ শূক্লা বলেন, “বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিন্দু-বিরোধী পক্ষপাত স্পষ্ট। পাশাপাশি, অনেক ক্ষেত্রেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে।”
এই বিল যদি আইনত গৃহীত হয়, তাহলে আমেরিকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।