ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: স্তন ক্যানসার একটি মারণ রোগ (Breast Cancer Research), যা বিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক মানুষের জীবনে শঙ্কার সৃষ্টি করে। কিছু রোগী চিকিৎসার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান, আবার কারও ক্ষেত্রে কয়েক বছরের মধ্যেই ক্যানসার ফিরে আসে। এই ব্যতিক্রমী ঘটনার কারণ খুঁজতে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছেন কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’ (এনআইবিএমজি)-এর বিজ্ঞানীরা। তাঁদের এই গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘কমিউনিকেশন বায়োলজি’-তে প্রকাশিতও হয়েছে।
কীসের খোঁজে এই গবেষণা? (Breast Cancer Research)
এই গবেষণায় যৌথভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন (Breast Cancer Research) এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক নিধান বিশ্বাস এবং টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের ডিরেক্টর সুদীপ গুপ্ত। এছাড়াও এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম মজুমদার এবং এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক অরিন্দম মৈত্র। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্তন ক্যানসারের একটি নির্দিষ্ট ধরন, ইআর/পিআর পজিটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার পর কেন ক্যানসার ফিরে আসে, তার জিনগত কারণ খুঁজে বের করা।
কোন পদ্ধতিতে গবেষণা? (Breast Cancer Research)
গবেষকরা প্রথমে স্তন ক্যানসারে (Breast Cancer Research) আক্রান্ত রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনোমিক সিকোয়েন্সিং করেন। গবেষণার জন্য দুটি দল বেছে নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দলে ছিলেন এমন রোগী যাঁরা হরমোন থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে ক্যানসার ফিরে আসেনি। দ্বিতীয় দলে ছিলেন এমন রোগী যাঁদের শরীরে অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যানসার ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: Sleep Talking: ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলার অভ্যেস? নেপথ্যে গুরুতর কারণ নেই তো?
ফলাফল পাওয়া গেছে কি?
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগীর শরীরে ক্যানসার ফিরে এসেছে, তাঁদের তিনটি জিনে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে। এই জিনগুলি হল টিপি৫৩, পিআইকে৩সিএ এবং ইএসআর১। এই মিউটেশনগুলিকে ‘রেজ়িসট্যান্স মিউটেশন সিগনেচার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও, এই রোগীদের ক্ষেত্রে ‘জিনোম ইনস্টেবিলিটি’ লক্ষ্য করা গেছে, অর্থাৎ টিউমার কোষে ডিএনএ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ক্রোমোজোমের পুনর্বিন্যাস ঘটেছে এবং ডিএনএ মেরামতির প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করছে না। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়া।
তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণা
এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক নিধান বিশ্বাস জানান, এই গবেষণার মাধ্যমে স্তন ক্যানসারের একটি নির্দিষ্ট সাবটাইপে চিকিৎসার পর কেন ক্যানসার ফিরে আসে, তার জিনগত কারণ অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘টিউমার অস্ত্রোপচারের পর যদি জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা যায় যে রোগীর শরীরে এই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে, তা হলে তাঁকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেই তা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে, প্রয়োজনে ফের অস্ত্রোপচার করা যাবে।’’

চিকিৎসকদের প্রতিক্রিয়া
ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, ইআর/পিআর পজিটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যান। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ক্যানসার ফিরে আসার ঘটনা লক্ষণীয়। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা চিকিৎসায় সুস্থ হচ্ছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে যদি এই জিনগুলি দায়ী হয় এবং জিনোম ইনস্টেবিলিটি কাজ করে, তা জানা গেলে ভবিষ্যতে চিকিৎসায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।’’
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই গবেষণা স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। জিনগত কারণ চিহ্নিত করার মাধ্যমে রোগীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি (পার্সোনালাইজড মেডিসিন) উন্নত করা সম্ভব হবে। এতে করে চিকিৎসার সাফল্যের হার বাড়বে এবং রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।